শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ছেলে হারানো বাবার প্রশ্ন

কত মা-বাবার বুক খালি হলে সড়ক নিরাপদ হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

আগামী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নিশ্চিত করাসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা হলে কেন্দ্রীয়ভাবে ১৫ ডিসেম্বর সকালে সচিবালয়ের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করবেন তারা। সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক অবস্থান কর্মসূচি শেষে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদুল ইসলাম আপন। অবস্থান কর্মসূচিতে গত কয়েক দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের স্বজনরা সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন। শহীদুল ইসলাম আপন বলেন, ‘সড়কে লাশের মিছিল বাড়ছে, সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। নিরাপদ সড়ক কেন আমাদের চাওয়া? এটা কেন সরকারের চাওয়া নয়? আমরা যদি নিরাপদে সড়কে চলতে না পারি, তাহলে কীভাবে আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করছি? শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু সেই শিক্ষার্থীদের সড়কে পিষে হত্যা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতসহ আমরা যে ৯ দফা দাবি জানিয়েছি তা বাস্তবায়নে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব, অনশন কর্মসূচি পালন করব।’ এদিকে একের পর এক সড়কে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি হলেও কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ বা বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রাণ হারানো শিক্ষার্থীর স্বজনরা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না দেখেও হতাশা প্রকাশ করেন তারা। ২০১৮ সালের ৩ আগস্ট মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের গোড়ায় বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল। আরোহী সাইফুল ইসলাম প্রাণ হারান। তার বাবা শাহজাহান আলী ছেলে সাইফুলের ছবি ও পেপার কাটিং নিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানান। তিনি বলেন, ওই ঘটনায় তখন বাসের চালককে গ্রেফতার করা হলেও কোনো বিচার হয়নি। কয়েক মাসের মধ্যেই চালক জামিন নিয়ে ছাড়া পেয়ে যান। তাকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।

তিন বছর ধরে বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। সরকারের এমন কোনো দফতর নেই যেখানে যাইনি। কোনো ক্ষতিপূরণ বা বিচার হয়নি। আর কত মা-বাবার বুক খালি হলে সড়ক নিরাপদ হবে।’ শিক্ষার্থীদের ৯টি দাবি হলো- আইনে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ড্রাইভারের ফাঁসির বিধান সংযোজন; নৌপরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া; ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করা; পাবলিক বাসে অতিরিক্ত যাত্রী না নেওয়া; শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুট ওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করা; প্রতিটি সড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার নির্মাণ করা; সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের ব্যয়ভারের দায়িত্ব সরকারের গ্রহণ করা; শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগনাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে ওঠানো এবং শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করা।

 

সর্বশেষ খবর