সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

তিন সন্তানের মুখে বিষ ঢেলে নিজেও খেলেন রোহিঙ্গা বাবা

দুজনের মৃত্যু

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফে তিন সন্তানকে বিষপান করিয়ে নিজেও বিষপান করলেন মো. আনোয়ার নামে একজন রোহিঙ্গা। গতকাল ভোররাতে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। একই রাতে তিনি তার তিন শিশুসন্তানকে বিষপান করিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এতে সোমাইয়া আকতার (৭) নামের তার এক সন্তান মারা যায়। অপর দুই শিশু মাহিয়া (৪) ও জাবেদকে (২) আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বলেন, বাবা ও এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ এবং আরও দুই শিশুকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত দুই শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। পরে দুই মৃতদেহের ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায় পুলিশ।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে বিষপানে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদের সূত্র ধরে স্বামী আনোয়ার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন।

তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা ফরিদ আলম জানান, নিজের তিন শিশুসন্তানকে বিষপানকারী এবং পরে নিজেও বিষপানে মারা যাওয়া মো. আনোয়ার নামের ব্যক্তি একজন পুরাতন রোহিঙ্গা। তিনি ১০ বছর আগে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া এলাকায় বসতি গড়ে মাছ ধরার পেশায় নিয়োজিত হন। আট বছর আগে একই এলাকার ইমাম শরীফ ওরফে কানপ্রুর মেয়ে রেহেনা বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলেসন্তান ছিল। তবে স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত। সাবরাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুস সালাম বলেন, ‘প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, দুপুরে আনোয়ার ও তার স্ত্রী রেহেনার মধ্যে পারিবারিক কলহ হয়। এতে রেহেনা তিন সন্তানকে রেখে বাবার বাড়ি চলে যান। এ সময় আনোয়ার স্ত্রীকে আত্মহত্যার হুমকিও দেন। পরে আজ (রবিবার) সকালে প্রতিবেশীরা তার ঘরে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বেড়ার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখতে পান, মেঝেতে নিথর দেহ পড়ে আছে এবং দুই সন্তান অঝোরে কান্না করছে। পরে প্রতিবেশীরা আমাকে জানালে আমি বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করি। পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে আনোয়ার ও তার শিশুসন্তান সোমাইয়াকে মৃত এবং অপর দুই শিশু মাহিয়া ও জাবেদকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে। এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে দুই শিশুকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের অবস্থা অনেকটা আশঙ্কামুক্ত। চিকিৎসকরা তাদের দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার আশা করছেন।

সর্বশেষ খবর