বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কৃষিপণ্য সংরক্ষণে চট্টগ্রাম বন্দরে অবকাঠামো নির্মাণ চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে চায় হযরত শাহজালাল ও মোংলা বন্দরের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

কৃষিপণ্য সংরক্ষণে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে অবকাঠামো নির্মাণে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য সুবিধার আওতায় ২৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এ অবকাঠামো নির্মাণের কথা জানিয়েছে দেশটি। বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে বন্দরের বাইরে বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়াতে অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতেও প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতর। ঢাকায় বিমানবন্দরের কাছাকাছি জায়গা পেলে তারা সেখানে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও প্যাকেজিংয়ের জন্য শর্টিং হাউজ নির্মাণ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ ইউএসডিএ-এর (ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার) একটি প্রতিনিধি দল গত ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে যায়। এ সময় তারা সেখানে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধাগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে তারা একটি প্রকল্পের আওতায় আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবক সচিব ওমর ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বন্দরে এসে আমাদের অবকাঠামো সুবিধা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তারা পোর্টের সক্ষমতা বাড়াতে কোল্ড চেইন সেন্টার নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু পোর্ট এরিয়ায় এ ধরনের অবকাঠামো করার মতো জায়গা নেই।

সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কৃষিপণ্য সংরক্ষণে বাণিজ্যিক স্বার্থে যে স্থাপনা করতে চাইছে, এটা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। তারা যদি এটা বন্দরের বাইরে নির্মাণ করে, তবে এর সুবিধা পাওয়া যাবে। আমাদের কনটেইনারগুলো সেখানে রাখা যাবে। সূত্র জানায়, আমেরিকার কৃষিপণ্য কেনার সুযোগ বাড়াতে বাংলাদেশের জন্য একটি কৃষি বাণিজ্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে- এমন বাজারগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে প্রতিবছর ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ গ্যারান্টি দিচ্ছে দেশটি। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্মসূচির জন্য যোগ্য বিশ্বের ১৩০টির মতো দেশের একটি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে একটি সেমিনার করে জানায়, বাংলাদেশের আমদানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের ভালো মানের কৃষিপণ্য আমদানি করলে তারা দেশীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে স্বল্প সুদে সেই ঋণ সুবিধা দেবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতর ইউএসডিএ বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে গত নভেম্বরে। ওই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সমুদ্র ও বিমান বন্দরের বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়াতে ২৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে ইউএসডিএ। আগামী পাঁচ বছরের জন্য গৃহীত এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাংলাদেশি বন্দরগুলোতে কৃষি বাণিজ্যের প্রচলিত সমস্যাগুলো সমাধান করে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও সহজ ও স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) করা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও শাখার মহাপরিচালক ও জাতীয় ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটির সদস্য সচিব মো. হাফিজুর রহমান বলেন, কৃষিপণ্যের আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে দেশের বন্দরগুলোর অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলছে, আমদানি-রপ্তানির জন্য কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের বন্দরগুলোতে কোনো ভালো হিমাগার সুবিধা নেই। এ ছাড়া সারা দেশে কৃষিপণ্য পরিবহনে কোল্ডভ্যানও নেই। তারা এসব অবকাঠামো সুবিধা দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দফতর আমাদের পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে সহায়তা করবে; পাশাপাশি চট্টগ্রাম, মোংলা সমুদ্রবন্দর ছাড়াও ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের আমদানি-রপ্তানি সুবিধা বাড়াতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণেও সহায়তার উদ্যোগ নেবে। এই সহায়তার জন্য দেশের আটটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি দফতর এরই মধ্যে সমঝোতা চুক্তি করেছে বলেও জানান ডব্লিউটিও শাখার মহাপরিচালক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর