বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাজুস সভাপতির দায়িত্বে সায়েম সোবহান আনভীর

♦ ভবিষ্যতে জুয়েলারি বাজার বিশাল হবে নীতিসহায়তা প্রয়োজন : মো. জসিম উদ্দিন ♦ আমরা জুয়েলারি শিল্পে রপ্তানিকারক দেশ হতে চাই : সায়েম সোবহান আনভীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজুস সভাপতির দায়িত্বে সায়েম সোবহান আনভীর

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর গতকাল বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি-বাজুসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেসরকারি খাতে গোল্ড রিফাইনারি স্থাপনকারী এবং সর্ববৃহৎ শিল্পোদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি-বাজুসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড ও আরিশা জুয়েলার্স লিমিটেডের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বপ্ন দেখছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে উৎপাদিত সোনার গয়না অচিরেই বিশ্ববাজারে রপ্তানি হবে। দেশের খ্যাতনামা উদ্যমী শিল্পোদ্যোক্তা সায়েম সোবহান আনভীর তাঁর নেতৃত্বাধীন প্যানেলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করায় সারা দেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা।

গতকাল রাজধানীর লে মেরিডিয়েন হোটেলে বাজুস আয়োজিত দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে সংগঠনটির নতুন ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২১- ২০২৩ মেয়াদের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। বাজুসের নবনির্বাচিত সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বাধীন নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি সংগঠনটির বিদায়ী সভাপতি এনামুল হক খান দোলনের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে। বাজুসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাজুসের পুনর্নির্বাচিত সহসভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন। প্রধান অতিথি মো. জসিম উদ্দিন তাঁর ভাষণে বলেন, আমরা এখন বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্বল্প আয়ের থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। অনেক মহাঘটনার সাল ২০২১। এ ২০২১ সালেই বাজুসের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন সায়েম সোবহান আনভীর। এখন দেশে মাথাপিছু ২ হাজার ৫৯৪ ডলার আয়ে আমাদের যে অবস্থা, খরচ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তা সাড়ে ৫ হাজার ডলার মাথাপিছু আয় হলে আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা ও বাজার অনেক বড় হয়ে যাবে। ২০৪১ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় সাড়ে ১২ হাজার ডলার হলে জুয়েলারি মার্কেটও বড় হবে। মানুষের আয় যখন বেশি হবে তখন খরচও বেশি হবে। এখন সামর্থ্য অনুযায়ী সোনার চেয়ে ডায়মন্ড বেশি ব্যবহার করছেন। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ভবিষ্যতে জুয়েলারির বিশাল বড় মার্কেট হতে পারে। আমি মনে করি পটেনশিয়াল সেক্টরে সরকার নীতিসহায়তা ও ইনসেনটিভ দিলে তারা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। জুয়েলারি পণ্যের বড় রপ্তানিকারক হতে পারে বাংলাদেশ। দেশের মার্কেট ছাড়াও আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব যদি এ শিল্পকে সহায়তা দিতে পারি। জুয়েলারি শিল্পের জন্য প্রযুক্তির বড় সাপোর্ট দরকার। বাজুসকে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য অনেক কর্মসূচি নিতে হবে। আপনাদের দক্ষতা উন্নয়ন করুন। জুয়েলারি ডিজাইন, বিক্রয় ও মধ্যস্থতাকারীদের দক্ষতা বড় সমস্যা।

মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, দেশে জুয়েলারি শিল্পে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। অনেক রাজস্ব আসতে পারে। ভারত এখন ৩ শতাংশ ভ্যাট নিচ্ছে, অথচ আমাদের দেশে ৫ শতাংশ। এটা হতে পারে না। আমি আশা করব বাজুসের সঙ্গে এসব বিষয়ে এফবিসিসিআই নিবিড়ভাবে কাজ করবে। যেসব খাত থেকে রপ্তানি ও কর্মসংস্থান হবে সেসব সেক্টরের সঙ্গে কাজ করতে চায় এফবিসিসিআই। আমার লক্ষ্য হলো ব্যবসা, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বাড়ানো।

বাজুসের নবনির্বাচিত সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমি আশা করব আমরা সবাই, নতুন যে কমিটি হয়েছে- একত্রিত হয়ে এ শিল্পটাকে আগামীতে উন্নত করার চেষ্টা করব। আমি এ পর্যন্ত দেখেছি জুয়েলারি শিল্পে শুধু আমদানিই করা হয়। এখনো আমরা রপ্তানির ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটাতে পারিনি।

সায়েম সোবহান আনভীর আরও বলেন, দেশে জুয়েলারি শিল্পের আরও প্রসার ও রপ্তানি ক্ষেত্রে বিকাশ ঘটাতে হবে। আমার মূলত লক্ষ্যটা থাকবে জুয়েলারি শিল্পের প্রসার। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট ও কর সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করব জুয়েলারি শিল্পের প্রসারের জন্য। জুয়েলারি শিল্পে আমরা রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে চাই।

সভাপতির ভাষণে বাজুসের বিদায়ী সভাপতি এনামুল হক খান দোলন বলেন, আমার জীবনে যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে তা বাজুসের নবনির্বাচিত সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীরের আগমনের মধ্য দিয়ে ঘুচে গেছে। মানুষ আমাকে একদিন স্মরণ করবে এই বলে যে, সায়েম সোবহান আনভীরের মতো একজন মানুষের হাতে আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করতে পেরেছি। আজ নতুন যারা এসেছেন তাদের উৎসাহ দেওয়ার সময়। এ উৎসাহ বৃদ্ধি করাই আমাদের কাজ। বাজুসের মর্যাদা বাড়লে আমাদেরও মর্যাদা বাড়বে। সায়েম সোবহান আনভীরের হাত ধরে কাজ করলে কোনো কিছু অর্জন বাকি থাকবে না। তাঁর হাত ধরেই আমাদের ভ্যাট ও করের সমস্যার সমাধান হবে।

বাজুসের পুনর্নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আমরা একটা পরিকল্পনা করেছি। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। সমস্যা সমাধানে আমরা কিছু স্ট্যান্ডিং কমিটি করব। আমাদের সমস্যা দেশবাসীকে জানাব। পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে কাজ করব।

এর আগে ২৯ নভেম্বর বাজুস নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে বাজুস নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল। তাঁর সঙ্গে নির্বাচন বোর্ডের সদস্য ছিলেন এফবিসিসিআই পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল এবং ঢাকা চেম্বারের পরিচালক হোসেন এ শিকদার। বাজুস নির্বাচনে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন এফবিসিসিআইর সহসভাপতি আমিন হেলালী। আপিল বোর্ডের দুই সদস্য ছিলেন এফবিসিসিআইর দুই পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসান ও এম জি আর নাসির মজুমদার।

নির্বাচন বোর্ড ঘোষিত চূড়ান্ত ফলাফলের তথ্যানুযায়ী সংগঠনটির ২০২১- ২০২৩ মেয়াদে নবনির্বাচিত সভাপতি বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে নির্বাচিত সাতজন সহসভাপতি হলেন- ক্রমানুসারে গুলজার আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, এম এ হান্নান আজাদ, বাদল চন্দ্র রায়, ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন, মো. আনিসুর রহমান দুলাল ও কাজী নাজনীন ইসলাম নিপা।

বাজুসের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটিতে টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন দিলিপ কুমার আগরওয়ালা। এ কমিটিতে নির্বাচিত নয়জন সহসম্পাদক হলেন- ক্রমানুসারে মাসুদুর রহমান, ঘোষ অপু, বিধান মালাকার, মো. জয়নাল আবেদীন খোকন, মো. লিটন হাওলাদার, নারায়ণ চন্দ্র দে, মো. তাজুল ইসলাম লাভলু, এনামুল হক ভুঞা লিটন ও মুক্তা ঘোষ। এ কমিটির কোষাধ্যক্ষ উত্তম বণিক। একই সঙ্গে কমিটিতে ১৬ জন সদস্য হলেন- ক্রমানুসারে বাজুসের সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, বিদায়ী সভাপতি এনামুল হক খান দোলন, মোহাম্মদ বাবুল মিয়া, মো. ইমরান চৌধুরী, পবিত্র চন্দ্র ঘোষ, রিপনুল হাসান, মো. মজিবুর রহমান খান, বাবলু দত্ত, মো. শহিদুল ইসলাম (এম ডি), জয়দেব সাহা, ইকবাল উদ্দিন, কার্তিক কর্মকার, উত্তম ঘোষ, মো. ফেরদৌস আলম শাহীন, কাজী নাজনীন হোসেন জারা ও মো. আসলাম খান।

সর্বশেষ খবর