শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সম্মত হলো বাংলাদেশ-ভারত

নো ম্যানস ল্যান্ডে নির্মাণ হবে স্থাপনা, দিল্লির এসওপি পর্যালোচনা করছে ঢাকা, নির্দেশনা যাবে বিজিবি ও বিএসএফের কাছে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সম্মত হলো বাংলাদেশ-ভারত

আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী দুটি দেশের স্থল সীমান্তের শূন্য রেখার ১৫০ গজের মধ্যে (নো ম্যানস ল্যান্ড) কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা না গেলেও বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষেত্রে এ রীতিটি বদলে যাচ্ছে। একটি বিষয়ে দুই দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায় সম্মত হয়েছে যে, জাতীয় স্বার্থে উভয় দেশ একে অপরের অনুমতি নিয়ে সীমান্তের ১৫০ গজের ভিতর স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে। এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণে যাতে বিজিবি বা বিএসএফ কোনো বাধা না দেয়, সে লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হবে। উভয় দেশ এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)  তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে দেড় শ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করতে ভারতের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এরই মধ্যে একটি এসওপি পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ এখন সেটি পর্যালোচনা করে দেখছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও আরেকটি এসওপি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারতের এসওপির বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত করতে গত ৮ ডিসেম্বর স্থলবন্দর কর্র্তৃপক্ষের কার্যালয়ে একটি সভা হয়। সিদ্ধান্ত হয় : ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রাপ্ত এসওপির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া এসওপি প্রণয়ন করবে; আন্তমন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সভা করে প্রণীত খসড়া এসওপি চূড়ান্ত করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সীমান্তের দেড় শ গজের ভিতরে স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাবটি ছিল মূলত আমাদের। সেই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায় জাতীয় স্বার্থে দেড় শ গজের ভিতর স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এখন নীতিনির্ধারণী এই সিদ্ধান্ত- দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবি ও বিএসএফকে জানানোর বিষয়ে যে নির্দেশনা সেটিও শীর্ষ পর্যায় থেকেই আসতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই নির্দেশনা দেওয়ার প্রক্রিয়া (এসওপি) তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শূন্য রেখার দেড় শ গজে স্থাপনা নির্মাণে উভয় দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সম্মতি থাকলেও এ বিষয়ে বিজিবি বা বিএসএফের কাছে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা পৌঁছেনি। বস্তুত সীমানার জিরো লাইন থেকে এই দেড় শ গজ দূরত্ব নো ম্যানস ল্যান্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ যখনই ভারত কাঁটা তারের বেড়া কিংবা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে গেছে তখনই বাধা দিয়েছে বিজিবি। আবার বিজিবি গত মার্চে সিলেটের বিয়ানীবাজার সীমান্তে একটি মসজিদ পুনর্নির্মাণ করতে গেলে বাধা দেয় বিএসএফ। ফলে এ নিয়ে দুই পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই দেখা দেয় চাপা উত্তেজনা। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ দুটি দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে এই উত্তেজনা কমাতেই নো ম্যানস ল্যান্ডে স্থাপনা নির্মাণে উভয় দেশের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত। ভারতের প্রস্তাবিত এসওপির বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত করতে গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের (বাস্থবক) চেয়ারম্যান ও সভার সভাপতি মো. আলমগীর বলেন, ‘আন্তসীমান্ত বাণিজ্য ও যাত্রী চলাচলের সুবিধার্থে স্থলবন্দরসমূহ সীমান্ত এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সীমান্ত লাইন হতে ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু বিভিন্ন স্থলবন্দরে ১৫০ গজের ভিতর স্থাপনা নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা, বাণিজ্য ও অবাণিজ্য জটিলতার ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সে গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় সীমান্তের জিরো লাইন হতে ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার অনুশাসন প্রদান করেছেন। তবে বিভিন্ন কারণে সীমান্ত এলাকায় নিয়োজিত বাহিনী কর্তৃক সীমান্তের জিরো লাইন হতে ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণে বাধার কারণে জাতীয় স্বার্থ এবং উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বাধা অপসারণ করে উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে মানসম্মত এসওপি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর