শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সীমান্ত এলাকায় গরু মহিষের জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক

চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবির উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু বা মহিষের বাচ্চা জন্ম নিলেই বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে নিবন্ধন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে এ নিবন্ধন করতে হয়। নিজের কাছেও রাখতে হয় এ-সংক্রান্ত একটি খাতা।

বিজিবিসূত্র জানান, খাতায় নিবন্ধনের নিয়মটি অনেক পুরনো একটি বিষয়। মূলত সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু-মহিষের অবৈধ চোরাচালান ঠেকাতে এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়; যা বাধ্যতামূলক। এতে সীমান্তবর্তী এলাকা বা ইউনিয়নের গরু-মহিষের হিসাব রাখা যায়। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার আষাঢ়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদসূত্রে জানা যায়, এ ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বাড়ি আছে। প্রতিটি বাড়িতেই কমপক্ষে দুটি ও গড়ে পাঁচ থেকে সাতটি করে গরু-মহিষ রয়েছে। সে হিসেবে পুরো ইউনিয়নে ২২ থেকে ২৩ হাজার গরু-মহিষ আছে। এসব পশুর হিসাব রয়েছে আষাঢ়িয়াদহ বিজিবির দুটি ক্যাম্পেও। একটি দিয়ার মানিকচক বিওপি ক্যাম্প, আরেকটি সাহেবনগর বিওপি ক্যাম্প। সাহেবনগর বিওপি ক্যাম্পের সহকারী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকায় গরু-মহিষের চোরাচালান হয় অনেক। এ কারণে গরু-মহিষের সঠিক হিসাব রাখার জন্য রেজিস্টার খাতায় পুরো ইউনিয়নের সংখ্যাটি সংরক্ষণ করা হয়। একটি আমাদের ক্যাম্পে থাকে, আরেকটি থাকে ইউনিয়ন পরিষদে এবং আরেকটি খাতা থাকে পশু মালিকের কাছে। কেউ গরু-মহিষ বেচাকেনা করলে এ হিসাব রাখা হয়। এমনকি কারও বাসায় নতুন কোনো গরুর জন্ম নিলেও তা-ও বিজিবি ক্যাম্প ও ইউনিয়ন পরিষদের রেজিস্টার খাতায় সংযোজন করতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ বাইরের গরু-মহিষ কিনে আনলে তা-ও বিজিবি ও ইউনিয়ন পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। আবার কেউ তার গরু বিক্রি করতে চাইলে তা-ও জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তা আমাদের কাছে নিয়ে এলে আমরা ওই ছাড়পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে গরু-মহিষের সংখ্যাটি বাদ দিয়ে দিই। কেনার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা।’ দিয়ার মানিকচকের বিউটি বেগমের আছে সাতটি গরু ও চারটি খাসি। তিনি জানান, গরুর নিবন্ধন করতে হয়। তবে ছাগলের নিবন্ধন লাগে না। তিনি আরও জানান, পাশেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। আগে সীমান্ত থেকে ভিনদেশি ও এলাকার মানুষ গরু নিয়ে এসে দেশি গরুর মধ্যে বেঁধে রাখত। এতে বোঝা যেত না কোনটা দেশি, কোনটা ভারতীয়। এখন ভারত থেকে গরু আনার পর বাঁধলেও তা ধরা পড়ে। তাই রেজিস্টার খাতায় নাম তোলার পদ্ধতি চালু হয়েছে। আষাঢ়িয়াদহ ইউপি চেয়ারম্যান মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই এ নিয়ম চলছে। তবে ২০১৭-১৮ সাল থেকে ব্যাপারটি বেশ কড়াভাবে দেখছে বিজিবি। আমরা ছাড়পত্র দিলেও মোট হিসাব আমাদের কাছে নেই। বিজিবির কাছে পুরো ইউনিয়নের হিসাব রয়েছে। তারা জানে কোন বাড়িতে কটা গরু রয়েছে।’ এ বিষয়ে রাজশাহী বিজিবির অধিনায়ক সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ‘গরু-মহিষের জন্য সীমান্তবর্তী বিওপি ক্যাম্পগুলোয় একটি রেজিস্টার খাতা মেনটেইন করা হয়। এটি স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ক্যাম্প কমান্ডারদের সমন্বয়ে হয়। মূলত চর এলাকায় কী পরিমাণ গরু আছে তার একটি হিসাব বিজিবির থাকে। নইলে সীমান্তে গরু চোরাচালান ঠেকানো সম্ভব নয়। যে কেউ ওপার থেকে গরু এনে বলে দেবে ওই গরুগুলো তার।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকেই অবৈধভাবে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে ঢোকে। এ সিস্টেমের কারণে গরু-মহিষের চোরাচালান রোধ হয়েছে। এমনকি আমরা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় পশুর সঠিক হিসাবও রাখতে সক্ষম হচ্ছি।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর