রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বেহাল সরকারি পর্যটন সেবা

সারা দেশে মাত্র ২৩ হোটেল-মোটেল, অধিকাংশই জীর্ণশীর্ণ

জিন্নাতুন নূর

বেহাল সরকারি পর্যটন সেবা

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চলছে পর্যটনের ভরা মৌসুম। পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু দেশের সরকারি পর্যটন সেবার বেহাল দশার কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। সরকারি হোটেল-মোটেলগুলোতে অপর্যাপ্ত সেবা এবং আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ভ্রমণকারীরা বেসরকারি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টমুখী হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন সরকারি সেবার ওপর মানুষ আস্থা হারাচ্ছে, অন্যদিকে বেসরকারি এসব  হোটেল-মোটেলে ভরা মৌসুমে পর্যটকদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের আওতায় থাকা হোটেল-মোটেলগুলোর যে জরাজীর্ণ অবস্থা এবং সেখানে যে অতিথি ধারণক্ষমতা সীমিত, সেটিও পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বশীল মহল বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে স্বীকার করেছেন। তারা আশা করছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে সরকার এদিকটার উন্নয়নে নজর দেবে।

সরেজমিন দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি হোটেল-মোটেল ঘুরে দেখা যায়, এসব হোটেলের বেশির ভাগই পুরনো ও জীর্ণশীর্ণ। বয়সের ভারে এর অনেকগুলোই এখন থাকার উপযোগিতা হারিয়েছে। এই হোটেল-মোটেলের অনেকগুলো আবার দেশ স্বাধীনের আগে তৈরি করা হয়। এর বেশির ভাগেই ব্যবহৃত হচ্ছে পুরনো আসবাবপত্র। এতে অতিথিদের থাকার জন্য কক্ষের সংখ্যাও সীমিত। আর হোটেল-মোটেলের পর্যাপ্ত আসনবিশিষ্ট রেস্তোরাঁও আগত পর্যটকদের জন্য ভোগান্তির আরেক কারণ। সরকারি এসব হোটেল-মোটেলে রয়েছে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব। ফলে এসব স্থানে সীমিতসংখ্যক কর্মচারী থাকায় আগত অতিথিদের কাক্সিক্ষত সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কক্সবাজারের মোটেল প্রবাল ও উপল-এর মেরামত কাজের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছরের শুরুতেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলোর সংস্কারে দায়িত্বশীল মহলের কাছে ১০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি বাস্তবায়ন হয়নি। আশা করছি করোনা পরিস্থিতির ভালো হলে সরকার এ খাতে দৃষ্টি দেবে। এ ছাড়া কুয়াকাটাতেও বড় আঙ্গিকে হোটেল বা মোটেল নির্মাণের চিন্তাভাবনা চলছে।’

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তথ্যে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটননির্ভর জেলা ও বিভাগে ২৩টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ২ দশমিক ৮২ একর জায়গায় ১৯৮৩ সালে তিনতলাবিশিষ্ট হোটেল শৈবাল নির্মিত হয়। এ হোটেলে রয়েছে ২৪টি কক্ষ, ৫০ আসনের কনফারেন্স কক্ষ এবং ১০০ আসনের সাগরিকা রেস্তোরাঁ। সম্প্রতি ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৪০ বছরের পুরনো হোটেল ভবনটির দেয়ালে রং উঠে কালো কালো ছোপ পড়েছে। একইভাবে ১৯৬২-৬৩ সালে কক্সবাজারের পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ৮ দশমিক ২৭ একর জায়গায় নির্মিত হয় পর্যটন মোটেল প্রবাল। ১৯৭২ সালে এটি বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছ থেকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়। এই মোটেলে ৩৮টি কক্ষ আছে। এ ছাড়া ১২টি ডরমেটরি ও ৯টি ইকোনমি কক্ষ আছে। আছে পাঁচটি হানিমুন কটেজ ও ৫০ আসনের রেস্তোরাঁ। কক্সবাজারের হলিডে কমপ্লেক্সের ৫ দশমিক ১০ একর জায়গায় তিনতলাবিশিষ্ট পর্যটন মোটেল উপল ১৯৬২-৬৩ সালে নির্মিত হয়। পরে বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছ থেকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়। এখানেও আছে ৩৮টি কক্ষ এবং ৫০ আসনের রেস্তোরাঁ। কক্সবাজারে মোটেল লাবণী ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয়। এখানে আছে ৬০টি কক্ষ আর ৮০ আসনের রেস্তোরাঁ। কক্সবাজার থেকে ৮৩ কি.মি. দূরে টেকনাফ উপজেলায় আছে ২ একর জায়গায় নির্মিত হোটেল নেটং। ২০০০ সালে নির্মিত হোটেলে আছে ১৫টি কক্ষ এবং ১৫০ আসনের মার্থিন রেস্তোরাঁ। বিভিন্ন সময় সরকারি কাজে আসা কর্মকর্র্তারা এসব সরকারি হোটেলে থাকেন। এতে সাধারণ পর্যটকরা এখানে সব সময় থাকার সুযোগও পান না।

পর্যটন জেলা বান্দরবান ও রাঙামাটিতেও পর্যটন করপোরেশনের মাত্র একটি করে মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্স রয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবানে ২০০৩ সালে তিনতলাবিশিষ্ট পর্যটন মোটেল বান্দরবান নির্মিত হয়। এতে আছে ২৬টি কক্ষ এবং ৫০ আসনের রেস্তোরাঁ। রাঙামাটিতে ১৯৭৮ সালে প্রাথমিকভাবে একটি দ্বিতল মোটেল বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। আর ২০১৩ সালে আরেকটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। আরেক পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ২০০৩ সালে তিনতলাবিশিষ্ট পর্যটন মোটেলের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। এতে আছে ২৫টি কক্ষ এবং ৫০ আসনবিশিষ্ট রেস্তোরাঁ। পর্যটন নগরী সিলেটে আছে পর্যটন মোটেল সিলেট। এটি ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করে। এতে আছে ২৮টি কক্ষ এবং ৬০ আসনের রেস্তোরাঁ। আর জাফলংয়ে ২০১৫ সালে তিনতলাবিশিষ্ট পর্যটন মোটেল জাফলংয়ের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়। এতে আছে মাত্র চারটি কক্ষ এবং ৫০ আসনের একটি রেস্তোরাঁ। এ ছাড়া কুয়াকাটায় ১৯৯৭ সালে দ্বিতল ভবনে পর্যটন হলিডে হোমস-এর যাত্রা শুরু হয়। এতে আছে ১৭টি কক্ষ এবং ৫০ আসনের রেস্তোরাঁ। পরে মোটেলের দক্ষিণ পাশে নতুন ইয়ুথ ভবন নির্মাণ করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর