সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সংকোচন নীতিতে সরকার

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশযাত্রা বন্ধ থাকায় জুলাই পর্যন্ত ২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়

মানিক মুনতাসির

করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে সরকারের আয় কমেছিল গত অর্থবছর থেকেই। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হয়। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেও (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। ফলে বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করে আসছে। প্রকল্পের গাড়ি ক্রয়, অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরসহ আরও কয়েকটি খাতে ব্যয় সংকোচন নীতি মেনে চলে সরকার। ফলে জুলাই-২০২১ পর্যন্ত শুধু ভ্রমণ খাতেই সাশ্রয় হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত সাশ্রয় হওয়া এ অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে অর্থ বিভাগ।

চলতি ২০২১-২২ বছরের সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ১৪ ডিসেম্বর সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন প্রস্তুত নীতিমালা প্রকাশ করেছে অর্থ বিভাগ। বাজেট অনুবিভাগ-১, অধিশাখা-১ থেকে প্রকাশিত নীতিমালায় বলা হয়, সব ধরনের নতুন/প্রতিস্থাপক হিসেবে ‘৪১১২১০১-মোটরযান’ ক্রয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের সবোঁচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে কোনোভাবেই স্থানান্তর করা যাবে না। একইভাবে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু জরুরি ও অপরিহার্য ক্ষেত্রে ভ্রমণ করা যাবে এবং সে ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না। একই সঙ্গে অব্যয়িত ৫০ শতাংশ অর্থ খাতে কোনোক্রমেই স্থানান্তর করা যাবে না। এতে আরও বলা হয়, উন্নয়ন ব্যয়ের কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অব্যয়িত অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।

এদিকে করোনা সংক্রমণ কমে এলেও ইতিমধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নতুন ধরন ওমিক্রনের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ছে। দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ফলে বাজেট বাস্তবায়নেও রয়েছে ধীরগতি। এমনকি আগের বছরের তুলনায় এ হার কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) যেখানে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ১৭ শতাংশ, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ১১ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে বাজেট বাস্তবায়ন কমেছে ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৬৪ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। এ সময় বাজেট ঘাটতি হয়েছে শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল এক দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্থ বিভাগের সূত্র জানায়, করোনা মহামারীর সময় বাড়তি ব্যয় মেটাতে সরকার ব্যয় কমানোর নীতি নেয়। এর অংশ হিসেবে অহেতুক বিদেশযাত্রা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন করে কোনো গাড়ি কেনাতেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয়ও হয়েছে। যা বাজেট ব্যয় ও অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তিও দিয়েছে। এ ছাড়া এর আগের বছর সরকারি চাকরিজীবীদের প্রশিক্ষণ, যানবাহন মেরামত ও সংরক্ষণ এবং অফিস সরঞ্জাম কেনাকাটাও নিরুৎসাহিত করা হয়। সরকারি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে বিদায়ী অর্থবছরের মতো নতুন অর্থবছরেও একই নীতি বাহাল রেখেছে সরকার। সরকারের এই কৃচ্ছ্রসাধন নীতির বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটা ভালো উদ্যোগ। তবে সব সময় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। এ ছাড়া বাজেট ব্যয়ের দুর্নীতি কমিয়ে এ খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থের সাশ্রয় করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

 

সর্বশেষ খবর