সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চুরি হওয়া পোশাক যাচ্ছে আফ্রিকা নেপালে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম পোর্টে রপ্তানির জন্য পাঠানো পোশাকের ৩০-৩৫ শতাংশ কাভার্ড ভ্যান থেকেই চুরি করে একটি চক্র। পরে সেই চোরাই পোশাকগুলো আফ্রিকা ও নেপালের বাজারে বিক্রি করে অন্য একটি অসাধু চক্র। আবার অন্য কয়েকটি দেশের বাজারেও বিক্রি করে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত কিছু গাড়িচালক, অসাধু বায়ার ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। সম্প্রতি মানতা অ্যাপারেলস লি. (এনভয় গ্রুপ) নামে একটি তৈরি পোশাক কোম্পানির রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো পোশাক চুরি হয়ে গেলে তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। এর আগে    শনিবার রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম ও মিরপুর এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন- মো. সবুজ, মো. মোতাহার হোসেন, মো. হানিফ, মো. নজরুল ও মো. আবুল কাশেম। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি কাভার্ড ভ্যান ও ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ৮ হাজার ৫৩ পিস চুরি যাওয়া পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, সম্প্রতি তৈরি পোশাক রফতানির জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পাঠাচ্ছিল এনভয় গ্রুপ। তাদের ৫৩ হাজার পিস পোশাক একটি কাভার্ড ভ্যানে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয়। কিন্তু সেটি চুরি হয়। কাভার্ড ভ্যান থেকে ৬০ লাখ টাকার পোশাক চুরি হওয়ার ঘটনায় ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়। এই ঘটনায় ডিবির মতিঝিল বিভাগ ছায়াতদন্ত শুরু করে। অনুসন্ধানে সংঘবদ্ধ একটি চোরচক্রের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা প্রতিদিন একাধিক রপ্তানিমুখী গার্মেন্টের পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান থেকে চালক ও গাড়ির মালিকের যোগসাজশে কৌশলে কার্টন থেকে পণ্য চুরি করে। রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট পণ্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার পথে কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের কার্টন থেকে ৩০-৩৫ শতাংশ পণ্য চুরি করে পুনরায় কার্টনগুলো হুবহু আগের মতো করে গাড়ি ছেড়ে দেয়।

পরবর্তী সময়ে চালক গাড়িটি নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেন। বিদেশি ক্রেতারা পণ্য কম পাওয়ায় দেশের উৎপাদিত গার্মেন্টকে দায়ী করে। বিদেশি ক্রেতা কম পণ্য পাওয়ার পর তা দাবি করতে তিন-চার মাস সময় লেগে যায়, যার ফলে দেশের গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে না পণ্যটি যাওয়ার সময় পথে কী ঘটেছিল। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে গার্মেন্ট খাত। রপ্তানি আয়ের মূল খাত এই গার্মেন্ট ব্যবসার ওপর দেশের প্রায় ২ কোটি লোকের জীবিকা নির্ভর করে। সাম্প্রতিক সময়ে রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট পণ্য চুরির ফলে বাংলাদেশ ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতা হারাতে হচ্ছে, যা এ খাতকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর