মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বছরের শুরুতে সব বই পাবে না শিক্ষার্থীরা

প্রাক-প্রাথমিকের ৩৩ লাখ বইয়ের কার্যাদেশই দিতে পারেনি এনসিটিবি

আকতারুজ্জামান

নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বিনামূল্যের নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকের ৩৩ লাখ ২ হাজার ৭৪০টি বই ছাপা শুরুর ব্যাপারে এখনো কার্যাদেশই দিতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আর নভেম্বরে এসে মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়ায় চলতি মাসের মধ্যে সব বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন বছরের শুরুতে সব বই পাবে না ছাত্রছাত্রীরা।

জানা গেছে, বই ছাপা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালক্ষেপণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে বিলম্ব হওয়া, দফায় দফায় টেন্ডার বাতিল হওয়াই বই ছাপাতে দেরি হওয়ার কারণ। এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিকে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৩০টি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৪টি, ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের জন্য ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ১৯২টি, দাখিলের জন্য ৩ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার ৭৮৩টি, ব্রেইল বই ৮ হাজার ৫৪টি ছাপা হবে। মাধ্যমিকে মোট বই ছাপা হবে ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৬ হাজার ২৫৬টি। সব মিলে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০টি বই ছাপা হবে।সূত্র জানায়, চলতি বছরে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বই সরবরাহ একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ, শিশু শিক্ষার্থীদের এসব বই প্রকাশের এখনো কার্যাদেশই দিতে পারেনি এনসিটিবি। কার্যাদেশ পাওয়ার পর বই দিতে ছাপাখানাগুলোকে ১৫ দিন সময় দিতে হবে। তাই দ্রুত বই পেতে প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাপ প্রয়োগ করতেও পারবে না এনসিটিবি। মাধ্যমিকের সব বই ডিসেম্বরে পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই ছাপার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ৯ নভেম্বর। আর শর্ত অনুযায়ী, বই ডেলিভারির জন্য ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার পর ছাপাখানাগুলো ৮৪ দিন সময় পাবে। তাই জানুয়ারি মাসেও জরিমানা ছাড়াই বই সরবরাহ করতে পারবে তারা। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির উপদেষ্টা তোফায়েল খান এ প্রতিবেদককে বলেন, ৯ ডিসেম্বর ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে এনসিটিবি ডিসেম্বরের মধ্যে বই পাওয়ার প্রত্যাশা করে কীভাবে? দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী তারাই তো ৮৪ দিন সময় দিয়েছে। ছাপাখানাগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে বইগুলো সরবরাহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু এনসিটিবির তো দাবি করা উচিত নয়। তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী, ১ শতাংশ পেনাল্টি দিয়ে ছাপাখানাগুলো বই সরবরাহের জন্য বাড়তি ২৮ দিন সময় পায়। তাহলে এই সময়ের মধ্যে বই দিলে ছাপাখানার দোষ হবে কেন? তিনি বলেন, টেন্ডার সংখ্যা বাড়ানো, দফায় দফার টেন্ডার বাতিল করা, অযৌক্তিক শর্ত দিয়ে এনসিটিবি সময় ক্ষেপণ করেছে। সময়ের কাজ সময়ে না করে অসময়ে এসে এনসিটিবি এখন তাড়াহুড়া করছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির ৭০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে চলে গেছে। আর এখনো প্রায় ৬ কোটি বই ছাপা বাকি রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই বাকি বইগুলো ছাপিয়ে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি ছাপাখানা কর্তৃপক্ষ জানায়- বই ছাপার চেয়ে পেজ অ্যারেঞ্জমেন্ট, বাইন্ডিং, কভারিং করতে বেশি সময় ব্যয় হয়। আর বই ছাপার পর এসব কাজ করতে হয়। সে হিসেবে ১০ কোটির বেশি বই ডেলিভারি বাকি রয়েছে। এদিকে মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতাদের অভিযোগ, বছরের শেষ দিকে এসে যেনতেনভাবে মানহীন বই ডেলিভারি দিচ্ছে কোনো কোনো ছাপাখানা। এ ছাড়া কোনো কোনো প্রেস সক্ষমতার বাইরে কাজ নিয়ে তারা শর্ত ভঙ্গ করে অন্য প্রেসে কাজ করাচ্ছে। টেন্ডার নেওয়া কাজের ১০ শতাংশ অন্য প্রেসে করানোর সুযোগ থাকলেও সেটি টেন্ডারে উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু এবার এটিও রক্ষা করা হচ্ছে না।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির উপদেষ্টা তোফায়েল খান অভিযোগ করেন, এনসিটিবি মানের ক্ষেত্রে এখন ছাপাখানাগুলোকে অঘোষিত নানা ছাড় দিচ্ছে। তিনি বলেন, নিম্নমানের কাগজের বই যদি এনসিটিবি নেয় তাহলে সরকারের অর্থের অপচয় করার দরকার কী? বেশি দামের কাগজের ঘোষণা দিয়ে কম মানের কাগজ গ্রহণ করবে কেন? অনেক প্রতিষ্ঠান নিউজপ্রিন্ট কাগজে বই দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দফতর সূত্র গতকাল জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ের ৯০ শতাংশ বই ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে চলে গেছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সূত্র জানায়, প্রাথমিকের ৯০ শতাংশ বই সরবরাহ করা হলেও একটি ছাপাখানা সময়মতো বই সরবরাহ করতে পারেনি। পরে এই সময় আরও বাড়ানো হয়েছে। তাই প্রাথমিকের শতভাগ বই ডিসেম্বরে পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তার তৈরি হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা এ প্রতিবেদককে বলেন, শিগগিরই প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হবে। মাধ্যমিকের ৮০ শতাংশ বই ইতিমধ্যে ছাপা হয়েছে। যেনতেনভাবে নিম্নমানের বই সরবরাহ করা হচ্ছে না। কার্যাদেশ দেরিতে দেওয়ার ব্যাপারে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, কার্যাদেশ নভেম্বরে দেওয়া বইগুলোও চলতি মাসের মধ্যে সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এসএসসির ফল হতে পারে ২৩-২৭ ডিসেম্বর

সর্বশেষ খবর