নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। ২৭টি ওয়ার্ডে একজন করে কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কর্মিসভা, সমন্বয় সভা ও উন্নয়ন প্রচার তুলে ধরে ২০২২ সালের প্রথমে নির্বাচনী জয় দিয়েই বছর শুরু করতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য সব ধরনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নাসিক নির্বাচনের ফসল ঘরে তুলতে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজমের নেতৃত্বে আগে গঠিত সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক ছিল গতকাল। কেন্দ্রীয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা এতে অংশ নেন। বৈঠক চলাকালে হঠাৎ ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। দলীয় সভানেত্রী কেন্দ্রীয়, জেলা-মহানগর নেতাদের বার্তা দিলেন, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। নিজ নিজ অবস্থান থেকে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে হবে। বেলা সাড়ে ১১টায় বৈঠক শুরু হয়।  মাঝখানে বিরতি দিয়ে চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নাসিক নির্বাচন পরিচালনা টিমের সমন্বয়ক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের সভাপতিত্বে যৌথ সভা শুরু হয়। যৌথ সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। সবার বক্তব্য ও মতামত শেষে নাসিক নির্বাচন পরিচালনা টিমের পক্ষ থেকে সবাইকে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভা পরিচালনা করেন নাসিক নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যসচিব, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণালকান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার, মারুফা আক্তার পপি, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। এ ছাড়া মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক চলাকালে জাহাঙ্গীর কবির নানকের ফোনে ভিডিও কল দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, ‘নৌকাকে বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এখানে কোনো ভেদাভেদ চাই না। নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। একটাই কথা- নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘হয়তো কারও পছন্দ আছে, কারও পছন্দ নাই, এ রকম থাকতে পারে। কিন্তু একজনই তো নমিনেশন পাবেন। কাজেই আমরা একজনকে দিয়েছি। এখন সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে, যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি।’ দলীয় সভানেত্রী যৌথ সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেওয়ার পর নৌকার পক্ষে স্লোগান দিতে শুরু করেন জেলা ও মহানগর থেকে আগত নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের দেখতে চান। তিনি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং সবাইকে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্‌বান জানান। এ সময় শেখ হাসিনার পাশে থাকা তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের আহ্‌বান জানান।

এদিকে সভা শেষে জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকের সভার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি আমাদের প্রার্থীকে দোয়া করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে বিজয় সুনিশ্চিতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন।’

এ সময় নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ দ্ধন্ধের কোনো প্রভাব পড়বে কি না- এমন প্রশ্নে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের মধ্যে ওই রকম কোনো বিভেদ নেই। আমরা নির্বাচনে একসঙ্গে কাজ করেছি- এটা অতীতেও দেখা গেছে, এবারও দেখা যাবে ইনশা আল্লাহ। মহানগর আওয়ামী লীগ, জেলা আওয়ামী লীগ সবাই মিলেই আমরা আমাদের নৌকার জন্য কাজ করব।’ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আপনার জন্য কাজ করবেন কি না- জানতে চাইলে আইভী বলেন, ‘অবশ্যই। তিনি (শামীম ওসমান) তো নৌকার লোক। তিনি নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন না। তিনি আমাদের দলের লোক, নৌকার লোক, জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। তিনি অবশ্যই নৌকার জন্য কাজ করবেন।’ এক প্রশ্নে আইভী বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জের সব মানুষের জন্য কাজ করেছি। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করেছি। আশা করি সবাই আমার পক্ষে থাকবেন এবং আমাদের ভোট দেবেন।’