সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদকে বিদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদকে বিদায়

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বিদায় নিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক চারবারের সভাপতি প্রখ্যাত সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ। গতকাল বাদ আসর রাজধানীর বারিধারা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সর্বশেষ নামাজে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি। সাংবাদিক নেতা রিয়াজউদ্দিন আহমেদকে অশ্রুজলে শেষ বিদায় জানিয়েছেন সর্বস্তরের সাংবাদিকরা। বেলা ১১টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁর কফিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে আনার পর কালো কাপড়ে ঘেরা একটি অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হয়। সেখানে সারিবদ্ধভাবে সাংবাদিকরা শ্রদ্ধা জানান। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের অশ্রুসজল ফুলে ফুলে ভরে যায় তাঁর কফিন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে লাশ হেলিকপ্টারে নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীর নারান্দীর গ্রামের বাড়িতে। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে করে আবার লাশ ঢাকায় আনা হয়। 

অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমেদ চারবার সাংবাদিকদের ‘সেকেন্ড হোম’ খ্যাত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। নবীন সাংবাদিকরা তাঁকে তাদের ‘বাতিঘর’ হিসেবে মনে করেন। নানা সংকটে সাংবাদিক-কর্মচারীরা তাঁর কাছে ছুটে যেতেন সমাধানের পথ খুঁজতে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রথম নামাজে জানাজায় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ  হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নোয়াবের সভাপতি একে আজাদ, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, নিউ এজের প্রকাশক এসএসএম শহিদুল্লাহ খান, এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, শওকত মাহমুদ, সাইফুল আলমসহ সম্পাদক পরিষদের নেতারা অংশ নেন। এ ছাড়া সিনিয়র সাংবাদিক শাহজাহান মিয়া, স্বপন সাহা, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, মনজুরুল আহসান বুলবুল, এম এ আজিজ, বদিউল আলম, গোলাম মহিউদ্দিন খান, কবি আবদুল হাই শিকদার, রফিকুর রহমান, এলাহী নেওয়াজ খান, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ড. আবদুল হাই সিদ্দিকী, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের শাহেদ চৌধুরী এ ছাড়াও মাঈনুল আলম, আশরাফ আলী, কাজী রওনাক হোসেন, বখতিয়ার রানা, কাদির কল্লোল, আকরামুল হাসান, শামসুদ্দিন দিদার, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়াসহ রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।

জানাজার আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের টেনিস কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রয়াত রিয়াজউদ্দিন আহমেদের কফিন সামনে রেখে শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরীর পরিচালনায় এতে ক্লাবের বর্তমান সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রয়াত রিয়াজউদ্দিন আহমেদের ভাই অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল জয়নাল আবেদীন ও তাঁর একমাত্র ছেলে মাশরুর রিয়াজ সেখানে ছিলেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, তাঁর এই মৃত্যুতে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে সাংবাদিকতা পেশায়। হয়তো তাঁকে হারানোয় যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে- তা এখনই পূরণ হবে না। তবে তাঁর সাহস, দেশপ্রেম, বস্তুনিষ্ঠতা, সাংবাদিক শ্রেণির জন্য তাঁর দরদন্ডঅবদানকে আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, রিয়াজ ভাইয়ের চলে যাওয়া আমাদের সবার জন্যই বেদনার ও কষ্টের। তিনি সেই সাংবাদিক- যিনি গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে, তাঁর মেধা দিয়ে সাংবাদিকতাকে সবসময় সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে গেছেন।

নিউজ পেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- নোয়াবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, রিয়াজ ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তবে ঘনিষ্ঠতা খুব বেশি দিনের নয়। তিনি দীর্ঘদিন সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে তিনি নোয়াবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আমাদের মাঝে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শওকত মাহমুদ বলেন, রিয়াজ ভাই তাঁর সাংবাদিকতার চৈতন্যবোধ দিয়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। জাতীয়  প্রেস ক্লাবের সভাপতি হিসেবে যখন তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, তখন আমিও তাঁর সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি লক্ষ্য করেছি যে, সাংবাদিকতার প্রতি তাঁর যে মমত্ব ও দায়িত্ববোধ, সর্বোপরি গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার জন্য তাঁর যে ভূমিকা তিনি তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে গেছেন। আজকে আমরা অভিভাবক শূন্য হয়ে গেছি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, রিয়াজ ভাই একজন ভালো সংগঠক ছিলেন, ভালো অভিভাবক ছিলেন। পেশার প্রতি তাঁর যে আত্মনিবেদন তার  কোনো তুলনা নেই। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে কখনো তিনি আপস করেননি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, রিয়াজ ভাইকে শুধু আমাদের অভিভাবক বললে ভুল হবে- অভিভাবকেরও উপরে যদি কিছু থাকে...। আমাদের সেই অত্যন্ত প্রিয়জনকে নিস্তব্ধ নিথর রেখে আজকে আমরা কথা বলছি। এটা আমরা কয়েকদিন আগেও ভাবতে পারিনি। কয়েকদিন আগেও তিনি এসে রিপোর্টার্স ইউনিটির নির্বাচন পরিচালনা করেছেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে সাংবাদিকতা জগতে যে অভাব তা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি বলেন, গত বছরের করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত ক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান শাহরিয়ারসহ ৩৯ জন সদস্য এবং গতকালও আরও একজন সদস্য সৈয়দ আকরামের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে তাঁদের আত্মার মাগফিরাতও কামনা করেন ক্লাব সভাপতি। জানাজা শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাব, সম্পাদক পরিষদ, এডিটরস গিল্ড, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, নোয়াব, ওকাব, পিআইবি, ডিইউ-৬৭ ক্লাব, জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্মচারী ইউনিয়ন, সমকাল, নিউজ টুডে প্রভৃতি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রয়াত এই সাংবাদিকের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। অর্ধ শতক বছরের সাংবাদিকতা জীবনে রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারের উপ-সম্পাদক, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক, ডেইলি টেলিগ্রাফের সম্পাদক এবং নিউজ টুডের সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ড পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর নয় দিন আগে তাঁকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর