মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দুবাইয়ে বসে সন্ত্রাসী জিসানের ঢাকায় নেটওয়ার্ক পরিচালনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুবাইয়ে বসে সন্ত্রাসী জিসানের ঢাকায় নেটওয়ার্ক পরিচালনা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পালিয়ে অবস্থান নেওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও টার্গেটেড হত্যাকাণ্ডের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছেন। কাশিমপুর কারাগারে থাকা দুই দন্ডপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গেও তার যোগসাজশ রয়েছে।

র‌্যাব বলছে, টাকার প্রয়োজন হলেই দুবাই ও কারাগার নিয়ে গড়ে তোলা নেটওয়ার্কটি মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে টার্গেট নির্ধারণ করে। এরপর টার্গেটেড ব্যক্তির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা দাবি করে স্থানীয় ছিঁচকে মাস্তানরা। চাঁদা না পেলে এসব মাস্তান গুলি করে তাদের হত্যাও করে। গতকাল দুপুর ১২টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব জানান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও তার ভাই শামীম দুবাইয়ে পালিয়ে আছেন। সেখানে বসে তিনি দেশের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করে কাশিমপুর কারাগারে থাকা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মুন্না এবং মামুন ওরফে ছক্কা মামুন। কারাগারে বসে মোবাইল ফোনে এ দুজন আবার তাদের অনুসারী ক্যাডারদের দিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও হত্যাকান্ড করে থাকে। গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পূর্ব বাড্ডার আলিফ নগর এলাকায় জেনারেটর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খান টুটুলকে গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে মাস্তানরা। সন্ত্রাসী জিসানের নামে এ চাঁদা দাবি করা হয়। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেন ওই ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করেন ডিবি পুলিশ কর্মকর্তারা। ফুটেজ পর্যালোচনা করে গত ২১ ডিসেম্বর ওই ঘটনায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নাসিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২২ ডিসেম্বর সে আদালতে জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সে ওমর খৈয়াম নিরু, জীবন হোসেন, ফারহান মাসুদ সোহান, নাঈম, রানা ও কাওছার আহমেদ ইমনসহ বিভিন্ন অপরাধীর নাম উল্লেখ করে।  নাসিরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ডিবির গুলশান জোনের টিম পার্বত্য বান্দরবানের দুর্গম এলাকা থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে কাওছার আহমেদ ইমনকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যে বাড্ডার বেরাইদ এলাকায় সন্ত্রাসীদের ভাড়া করা বাসা থেকে ওই দিন রাতে মোহাম্মদ জীবন হোসেনকে একটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন ও ১ হাজার ইয়াবা, ওমর খৈয়াম নিরুকে একটি রিভলবার, চারটি ২২ বোরের রিভলভারের গুলিসহ একটি ম্যাগজিন ও ৪০০ ইয়াবা, ফারহান মাসুদ সোহানকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি এবং ৬০০ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। ইমনের দেওয়া তথ্যে তার ঘরের একটি ব্যাকপ্যাকের ভিতর থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয় এবং একই ঘরে থাকা আসলামকেও ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। হাফিজ আক্তার বলেন, দুবাইয়ে অবস্থানরত জিসান ও তার ভাই শামিম এবং কাশিমপুর কারাগারে থাকা ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মামুনের ক্যাডার সোহান, ইমন, জীবন এবং নিরুর টাকার প্রয়োজন হলে তারা এলাকার বড় ভাই মহিন উদ্দিন জালালের কাছে যায় এবং একটি কাজ বা টার্গেট দেওয়ার জন্য বলে। পরবর্তী সময়ে মহিন উদ্দিন জালাল জেনারেটর ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম টুটুলের খোঁজ দেয়।

 নিরু, জীবন এবং ইমন কাজটি করার জন্য নাসিরকে ঠিক করে। কীভাবে গুলি করতে হবে অর্থাৎ পিস্তল চালাতে হয় তা বাসের হেলপার নাসিরকে শিখিয়ে দেয় ক্যাডার জীবন হোসেন। গত ২০ ডিসেম্বর সকালে জীবন এবং নাঈম নাসিরকে অস্ত্র দিলেও ওই দিন নাসির গুলি করতে যেতে পারেনি। পরের দিন বিকালে নাসির তার সহযোগী রানাকে নিয়ে টুটুলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে হত্যার হুমকি দেয় এবং চাঁদা দেওয়ার কথা বলে। এতে ব্যবসায়ী রাজি না হলে তাকে গুলি করা হয়। এরপর নাসির অস্ত্রটি রামপুরা ব্রিজের কাছে গিয়ে জীবনের কাছে ফেরত দেয়। যে অস্ত্র ব্যবহার করে ব্যবসায়ী টুটুলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে গুলি করা হয়, সেই অস্ত্র জীবনের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা সবাই দুবাই প্রবাসী চিহ্নিত সন্ত্রাসী জিসানের ক্যাডার বলে স্বীকার করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দুবাই প্রবাসী সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দক্ষিণ বাড্ডায় ২০০৬ সালের ফোর মার্ডার মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এবং বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে অবস্থানরত মামুন ওরফে ছক্কা মামুনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মূলত মামুন ও ছক্কা মামুনের মাধ্যমে জিসানের সঙ্গে ক্যাডার জীবনের পরিচয় হয়। জিসান কাশিমপুর কারাগারে থাকা মামুনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। পরবর্তী সময়ে জীবনের মাধ্যমে জিসানের সঙ্গে সোহান এবং অন্যদের পরিচয় হয়। তারা হোয়াটসঅ্যাপে তাদের যোগাযোগ রক্ষা করত। জিসানের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে অস্ত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে সোহান। ব্যবসায়ী টুটুলকে যারা গুলি করেছে, তারা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। সন্ত্রাসীরা তাদের ব্যবহার করেছে। তারা টাকার বিনিময়ে গুলি করে। গ্রেফতার হওয়া সাত সন্ত্রাসীর মধ্যে চারজনের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। তিনজন বিএনপি ও একজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে তারা রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ারও চেষ্টা করে। জিসানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার।

সর্বশেষ খবর