মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জয়নাল হাজারীর ইন্তেকাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জয়নাল হাজারীর ইন্তেকাল

চলে গেলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী। গতকাল বিকাল সোয়া ৫টায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি হৃদযন্ত্র, কিডনি ও ফুসফুস সংক্রমণে ভুগছিলেন। গত ১৫ ডিসেম্বর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগের এই নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জয়নাল হাজারীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এ ছাড়া গভীর শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। ফেনী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় রাজধানীর সাত মসজিদ রোডে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হবে নিজ এলাকা ফেনীতে। সেখানে পাইলট হাইস্কুল মাঠে বাদ আসর জানাজা শেষে মাস্টার পাড়ার নিজ বাসভবন ‘মুজিব উদ্যানে’ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। ১৯৪৫ সালে জন্ম নেওয়া জয়নাল হাজারী আজীবন আওয়ামী লীগেই যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দুই দশক ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০১ সালের ১৭ আগস্ট দেশ ছেড়ে যান জয়নাল হাজারী। সংসদ সদস্য হিসেবে তার শেষ মেয়াদে নানা বিতর্কে জড়ান জয়নাল হাজারী। এ কারণে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তিনি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ফিরেন জয়নাল হাজারী। পাঁচটি মামলায় ৬০ বছরের সাজা হয় তার। এরপর ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে আত্মসমর্পণ করলে আট সপ্তাহের জামিন পান হাজারী। পরে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। চার মাস কারাভোগের পর ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন তিনি। পলাতক অবস্থায় হাজারীর বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা হয়, যার মধ্যে পাঁচটিতে সাজার রায় হলেও উচ্চ আদালত তাকে সবটিতেই খালাস দেয়। বহু ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত এই রাজনীতিবিদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনীর তিনটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও সেগুলো বাতিল হয়ে যায়। তখন তাকে বহিষ্কার করেছিল আওয়ামী লীগ। ফেনীর এক সময়ের দন্ডমুন্ডের কর্তা হিসেবে বিবেচিত অকৃতদার জয়নাল হাজারী শেষ জীবনে রাজনীতিতে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিলেন। তবে কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেওয়া হয়েছিল তাকে। গত এক যুগে ফেনী ছেড়ে ঢাকায় থেকে হাজারিকা প্রতিদিন নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে চলছিলেন তিনি। মন্ত্রিসভার সদস্যের মধ্যে আরও শোক জানিয়েছেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এবং উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম প্রমুখ। বিশিষ্ট এই বীর মুক্তিযোদ্ধার রুহের মাহফিরাতের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শফিকুল বাহার টিপু।

 আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে শোক জানিয়েছেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্লেন (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপ্ন, এস এম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর