বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বসুন্ধরায় শাখা উদ্বোধন

ঢাকা ব্যাংক চেয়ারম্যান ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা চাইলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা ব্যাংক চেয়ারম্যান ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা চাইলেন

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইউনিয়ন টাওয়ারে গতকাল ঢাকা ব্যাংকের ১০৮তম শাখার উদ্বোধন করা হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার মনে করেন ব্যাংকিং খাতের ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা গেলে স্বল্পসুদে নতুন ঋণ বিতরণ করা সম্ভব। তাই তিনি ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

আবদুল হাই সরকার গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইউনিয়ন টাওয়ারে ঢাকা ব্যাংকের ১০৮তম শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক, ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান এ টি এম হায়াতুজজ্জামান, পরিচালক আলতাফ হোসেন সরকার ও ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখার ম্যানেজার শামস রোমানা রিমি। আবদুল হাই সরকার বলেন, ‘ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারের আরও কিছু শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তাহলে অনেক টাকা ব্যাংকিং খাতে ফিরে আসবে। নতুন গ্রাহকদের স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া যাবে। খেলাপি ঋণ আমাদের অনেক কষ্ট দিচ্ছে। এর ফলে আমাদের সুদহার অনেক বেশি। খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার শক্তিশালী আইন করলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। আইনের মাধ্যমেই ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব।’

ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘গ্রাহকই আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহকরা আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করেন, তাদের সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে চলেছি। গ্রাহক যাতে খুশি থাকেন সেটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। যারা আমাদের পৃষ্ঠপোষক, গ্রাহক আমরা তাদেরই গুরুত্ব দিই। আমাদের মূল পরিকল্পনায় রয়েছে গ্রাহককে ভালো সেবা দেওয়া।’

আবদুল হাই সরকার বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে ব্যাংকটিকে পুরো ডিজিটালাইজড করা। গ্রামের সাধারণ মানুষের সেবা করা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকে শাখা-উপশাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার কাজ ইতিমধ্যে আমরা শুরু করেছি। ধীরে ধীরে আমরা দেশের বাইরেও কার্যক্রম শুরু করব। লোকাল ব্যাংক থেকে গ্লোবাল উইং বাড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে। সে পরিকল্পনা মাথায় রেখেই কাজ করছি। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। এর মধ্যে আইএফসির একটি অ্যাওয়ার্ড রয়েছে। গ্রাহককে খুশি করা এবং জাতি গঠনে কতটুকু অবদান রাখতে পারব সেটা নিয়েই কাজ করছি।’ বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ঢাকা ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখার জন্য তাঁর শুভ কামনা জানিয়ে বলেন, ‘আশা করি বসুন্ধরা গ্রুপ ও ঢাকা ব্যাংকের একে অন্যের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমি ঢাকা ব্যাংকের পর্ষদকে ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে এমডি এমরানুল হককে। তাঁর কর্মদক্ষতার মাধ্যমে ঢাকা ব্যাংক আইএফসি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।’ অনুষ্ঠানে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, ‘ঢাকা ব্যাংক ২৬ বছর ধরে দেশের মানুষের সেবা করছে। আমাদের একটাই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য- আমরা ধীরে ধীরে প্রসার করব যাতে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারি। এজন্য আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ব্যাসেল কমপ্লায়েন্স মেনে চলছি। আমরা আগামীতে দেশের বাইরে প্রথমে এশিয়া, ইউরোপ তার পরে আমেরিকায় ঢাকা ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে চাই। কারণ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে তখন দেশের বাইরে আমাদের কার্যক্রম থাকতেই হবে।’

তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ব্যাংকিংয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ আদায়সংক্রান্ত সম্প্রতি জারি করা সার্কুলারটি গুরুত্বপূর্ণ। তার পরও এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলোচনা সাপেক্ষে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তাঁর প্রত্যাশা- ব্যাংকিং খাত যাতে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে থাকে সে বিষয়টি বিবেচনা করেই বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে।

এমরানুল হক বলেন, ‘নতুন বছরে বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের দেশেও তার প্রভাব পড়বে। কারণ বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির যোগসূত্র। সেটা আমাদের জন্য হবে নতুন চ্যালেঞ্জ। যদিও কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থনীতির অবস্থা ভালো ছিল। আশা করি ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে। ২০২১ সালে আমরা যতটুকু ধারণা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো ছিলাম। বিশেষ করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো নিয়ে এসেছে ব্যাংকিং খাত সেগুলো সুন্দরভাবে বিতরণের চেষ্টা করেছে। যতটুকু খারাপ হওয়ার ধারণা ছিল সে তুলনায় অনেক ভালো ছিলাম। গত দুই বছর উন্নয়ন কার্যক্রম একটু কম হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে পর্যাপ্ত তারল্য ছিল। নতুন বছরে উন্নয়ন কার্যক্রম বেড়ে গেলে তারল্যের ওপর একটা চাপ আসতে পারে। সেজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা সম্ভব হবে সুষ্ঠুভাবে ঋণ বিতরণ, আদায় ব্যালান্স শিটটা পরিষ্কার রাখতে পারলে।’

সর্বশেষ খবর