বৃহস্পতিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
আলোচনা সভায় বক্তারা

সরকার চাইলে যে কোনো সময় খেলাপি ঋণ কমাতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আর্থিক দুর্নীতি বা যে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন ড্রয়ারে থেকে গেলে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। কর্তৃপক্ষের উচিত যখন অভিযোগ আসবে তখনই তার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ সরকার চাইলেই বন্ধ করতে পারে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ প্রদান যেভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থনীতি, ব্যাংকিং কার্যক্রমে আমাদের অনেক অর্জন থাকলেও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এখনো শৃঙ্খলা আনা যায়নি।’ গতকাল রাজধানীর শাহবাগের একটি হোটেলে বণিক বার্তা আয়োজিত দ্বিতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন, পাঁচ দশকে উন্নয়ন অভিযাত্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংক শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ড. আতিউর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহম্মদ ফরাসউদ্দিন ভিডিওকলে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের সিইও মাশরুর আরেফিন। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। আলোচনায় বক্তারা বলেন, রাষ্ট্র বা সরকার চাইলে খেলাপি ঋণ যে কোনো সময় বন্ধ করতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো একই ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকে রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে থাকলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। খেলাপি ঋণ কমাতে পারলে সুদহারও কমে যাবে। আলোচনায় ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি বড় কারণ এটাকে এড়িয়ে যাওয়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যখন অভিযোগ আসে তখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীনতার পর আর্থিক খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় ভূমিকা রয়েছে। আবার শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ব্যর্থতাও আছে। বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। এসব অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন বাস্তবায়ন আমরা সব সময় দেখতে পাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানি লন্ডারিং ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ ও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। কাস্টমস, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ করা উচিত।’

ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে বর্তমানে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তা আরও ১ শতাংশ বাড়ানো উচিত। কভিড-১৯-এর কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে বড় যে তিনটি খাত ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে রেমিট্যান্স অন্যতম। যে কারণে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা আরও ১ শতাংশ বাড়ানো উচিত বলে মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে দেশের কৃষি খাত ছিল রক্ষাকবচ। এর পরেই ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি খাত। করোনাকালে সারা পৃথিবীর অর্থনীতি যখন ধসে গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি তখনো দাঁড়িয়ে ছিল। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ফলে। বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ভরসার প্রতীক। এ ভরসা ধরে রাখতে হবে।’

সর্বশেষ খবর