রবিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বে করোনা ঊর্ধ্বমুখী উৎকণ্ঠা বাংলাদেশেও

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বিশ্বে করোনা ঊর্ধ্বমুখী উৎকণ্ঠা বাংলাদেশেও

নতুন বছরেও পিছু ছাড়ছে না মহামারি করোনাভাইরাস। বছর শুরু হচ্ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগের মধ্য দিয়ে। ওমিক্রনের সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে এ পর্যন্ত ১০ জন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ২ শতাংশে থাকলেও ওমিক্রন ঘিরে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারস ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৮২৪ জন। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৭ জন। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে ৫ হাজার ৬২৭ জন মারা গেছেন। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ৮৪ লাখ ৬২ হাজার ২৪৮ জনে। বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৭২ জনে। দৈনিক সংক্রমণের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ফ্রান্সের অবস্থান। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ২০০ জন। গত ২৪ ঘণ্টার তুলনায় দেশটিতে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে।

আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮৫ জন। নতুন করে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন ১০ হাজার ২৮২ জন। মহামারি শুরুর পর এ পর্যন্ত দেশটিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ২২ লাখ ৮৭ হাজার ৫২১ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৬ লাখ ১৯ হাজার ১০৯ জন। আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিবেশী দেশ ভারতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৫ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৪ লাখ ৮১ হাজার ২৩৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে সংক্রমিত হয়েছেন ২১ হাজার ৯৮১ জন। দেশটিতে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বিশ্বের এই পরিস্থিতির মধ্যে দেশেও বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ হার। গতকাল দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭০ জন, মারা গেছেন চারজন। শনাক্তের হার ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত ৩১ ডিসেম্বর করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫১২ জন, মারা গেছেন দুজন। শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত ২৭ ডিসেম্বর ৩৭৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন একজন। শনাক্ত হার ২ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত ২৫ ডিসেম্বর শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ০৭ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৭৫ জন। ২৪ ডিসেম্বর শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ০২ শতাংশ। আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৪২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী কমে আসায় হাসপাতালগুলোতে অল্পসংখ্যক শয্যা নির্দিষ্ট রেখে নন-কভিড রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়লে আবার আগের মতো হাসপাতালগুলোতে কভিড রোগীদের সেবা দেওয়া হবে। প্রস্তুতি সবই রয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, শয্যা সবই রয়েছে। ডিএনসিসি কভিড হাসপাতাল এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফিল্ড হাসপাতাল চালু আছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় দুই বছরে রোগী ব্যবস্থাপনায় আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেক কম ছিল। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে পারব।’

ডিসেম্বরের শুরু থেকেই দেশে ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের হার। এর মধ্যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। এর মধ্যেই দেশে ১০ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটারের নমুনায় প্রথম ওমিক্রনের উপস্থিতি ধরা পড়ে। সেখান থেকে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা ১০-এ পৌঁছেছে। ডেল্টা এবং ওমিক্রন একসঙ্গে হাইব্রিড ধরন ডেলমিক্রনে রূপ নিচ্ছে। এটি নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট নয়। ডেল্টা ও ওমিক্রন দুটি ভ্যারিয়েন্টেরই জীন অদল-বদল করার ক্ষমতা থাকায় ডেলমিক্রনে দুই ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিন থাকে। এই প্রক্রিয়াকে রিকম্বিনেশন বলে। ওমিক্রনের উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতা ও ডেল্টার মারাত্মক রোগ তৈরির ক্ষমতা মিলেমিশে ডেলমিক্রন ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। যুক্তরাজ্য ও উত্তর আমেরিকায় এরই মধ্যে ডেলমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ইউরোপের বর্তমান অবস্থার মতো হোক তা সরকার চায় না। কভিড সংক্রমণের হার ফের ২ শতাংশের ওপরে উঠেছে, যা ১ শতাংশের ঘরে ছিল। এটা আশঙ্কাজনক। আমি সবাইকে অনুরোধ করব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। নইলে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে যাবে, একইভাবে মৃতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাবে।’ ওমিক্রন ঠেকাতে দেশের বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, নৌবন্দরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। জোরদার করা হয়েছে স্ক্রিনিং কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। তাই এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উপসর্গ থাকলে সেসব রোগীকে আইসোলেশনে নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে। সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা অবশ্যই বুস্টার ডোজ নেবেন।’

 

 

সর্বশেষ খবর