মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ছড়িয়ে পড়ছে টিউলিপ চাষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

ছড়িয়ে পড়ছে টিউলিপ চাষ

দৃষ্টি জুড়ানো টিউলিপ ফুল ছিল মানুষের মনে। বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে দিনপঞ্জিকার পাতায় আবার টেলিভিশন বা হিন্দি ছবির দৃশ্যে টিউলিপ দেখে মন ভরাতো দেশের মানুষ। বাস্তবে টিউলিপ দেখতে ভারতের কাশ্মীর, নেদারল্যান্ডসসহ শীতপ্রধান দেশে হাজার টাকা খরচ করে ভ্রমণে যেত সাধারণ মানুষ। টিউলিপ চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী না হওয়ায় ফুলটি দেশে এক প্রকার স্বপ্নের মতো মনে হতো।

২০২০ সালে দেশে প্রথমবারের মতো গাজীপুরের শ্রীপুরে সেই টিউলিপের চাষ করেন দেলোয়ার হোসেন। দেশের মাটিতে প্রথম টিউলিপ ফুল ফোটায় রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। তার টিউলিপ বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ তার বাড়িতে ভিড় জমায়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেলোয়ারের বাগানে দ্বিতীয়বারের মতো টিউলিপ ফুল ফোটে। দেশের টিউলিপ নজর কেড়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক  ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ কৃষি দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

টিউলিপ ফুলকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে দেলোয়ার হোসেন এবার উত্তরবঙ্গের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, রাজশাহী ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজ উদ্যোগে বাগান তৈরি করছেন। দেলোয়ার হোসেন বলেন, দেশে টিউলিপের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমার বাগানে পরপর দুবার টিউলিপ ফোটায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সেই চিন্তা থেকে এবার নেদারল্যান্ডস থেকে হলুদ, লাল, চার ধরনের পিংক, অরেঞ্জ, সাদা, পার্পেল রঙেরসহ আট-দশ ধরনের ৭০ হাজার টিউলিপের বাল্ব (বীজ) আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা টিউলিপ বাল্ব দিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৪০ হাজার, রাজশাহীতে ১ হাজার ও যশোরের গদখালীতে ৫ হাজার বাল্ব বাগান তৈরি করে দেশে টিউলিপের এলাকা নির্ধারণে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। এ ছাড়া অনেক ছোট উদ্যোক্তা টিউলিপের বাল্ব সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ করেছেন। ইতিমধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বাল্ব বুনন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে তিনি জানান। দেলোয়ার হোসেন তার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন মৌমিতা ফ্লাওয়ারস। এর আগে জার্বেরা, চায়না গোলাপ ও বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষে সফল হয়েছেন তিনি। সফল ফুলচাষি হিসেবে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক পান। দেশে প্রথমবারের মতো ভাইরাসমুক্ত সবজির চারা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন তিনি। ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দেশে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ফুল আমদানি করা হয়। ফুল চাষে জড়িয়ে আছে কৃষি অর্থনীতির একটি অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ফুল চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠলেও আমরা পিছিয়ে। অর্থনীতি ও চাহিদার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন বিদেশি ফুল দিয়ে আমার স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও থেমে থাকিনি। এরই মধ্যে পেয়ে যাই একটির পর একটি সফলতা। জার্বেরা, চায়না গোলাপের পর টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে গত বছর নতুন সফলতা এসেছিল। নেদারল্যান্ডস টিউলিপ ফুল উৎপাদনকারী প্রধান দেশ। টিউলিপকে নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্প। তাই দেশটি প্রতি বছর পালন করে টিউলিপ উৎসব। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে টিউলিপ ছিল স্বপ্ন। আর এ স্বপ্নই ধরা দেয় দেলোয়ারের কাছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর