মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সিলেটে কোটি টাকা নিয়ে উধাও আঁখি সুপার শপ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

‘একটি পণ্য কিনলে আরেকটি ফ্রি’ এমন লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে সিলেটে ইভ্যালি খ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘আঁখি সুপার শপ’। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের জন্য হাজার হাজার গ্রাহক বিনিয়োগ করেছিলেন এ প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু হঠাৎ প্রতিষ্ঠানের অফিস বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দেওয়ার পর মাথায় হাত পড়েছে গ্রাহকের। অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার ঘটনায় সিলেটে প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্ণধারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী দুই গ্রাহক। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ই-কমার্সভিত্তিক ব্যবসা চালু করে ‘আঁখি সুপার শপ’। সিলেট শহরতলির বটেশ্বরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় থেকেও ব্যবসা পরিচালনা করা হতো। বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটি অবিশ্বাস্য কম মূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির অফার দিত। এমনকি ‘একটি পণ্য কিনলে একই রকম আরেকটি পণ্য ফ্রি’ দেওয়ার অফার দিয়ে আসছিল আঁখি সুপার শপ। শুরুতে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের পণ্যের ওপর অফার দিত প্রতিষ্ঠানটি। এতে অংশ নিয়ে গ্রাহকরা ঠিকই একটি কিনে আরেকটি পণ্য ফ্রি পেতেন। ফলে দিন দিন গ্রাহকের আস্থা তৈরি হতে থাকে। এ আস্থা কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি তারা মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ওপর ‘একটি কিনলে একটি ফ্রি’ অফার দেয়। অর্থাৎ কেউ একটি মোটরসাইকেলের টাকা জমা দিলে পাবেন দুটি। কোনো কোনো গ্রাহকের কাছে অর্ধেক মূল্যে মোটরসাইকেল বিক্রিরও অফার দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ অফারের পর হুলুস্থুল পড়ে যায়। কয়েক দিনের মধ্যেই কয়েক শ মোটরসাইকেলের অর্ডার পায় প্রতিষ্ঠানটি। ২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে গ্রাহকরা অফিস তালাবদ্ধ ও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে প্রতারণার ব্যাপারে নিশ্চিত হন তারা। প্রতারাণার ঘটনায় সিলেট আদালতে দায়ের করা দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে আঁখি সুপার শপের মালিকপক্ষ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাসনীপুর গ্রামের আসমা শারমিন আঁখি (২৬) ও পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৩১)। মামলার বাদীরা হলেন সিলেট মহানগরের শাহপরান উপশহর এলাকার মো. জিয়াউর রহমান ও মো. আশরাফ হোসেন। এর মধ্যে জিয়াউর রহমান ৩ লাখ ৭ হাজার ২০০ আর আশরাফ হোসেন ৯ লাখ ৬১ হাজার ৭২০ টাকা খুইয়েছেন।

আহমেদ মাসুম নামে অন্য গ্রাহক জানান, ১৬ ডিসেম্বর তিনি সুজুকি কোম্পানির ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য অর্ধেক তথা ১ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা ও বাজাজ কোম্পানির ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকার একটি মোটরসাইকেলের জন্য অর্ধেক অর্থাৎ ৯২ হাজার টাকা জমা দিয়ে অর্ডার করেছিলেন। এখন আঁখি সুপার শপ তালাবদ্ধ ও কর্তৃপক্ষ পলাতক থাকায় তিনি মাথা চাপড়াচ্ছেন। ফেসবুকে আঁখি সুপার শপের একটি পেজ রয়েছে। তাতে দেখা গেছে ২৯ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছেন- ‘পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে আঁখি সুপার শপ বন্ধ রাখা হয়েছে। আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। একটু ধৈর্য রাখুন। আমরা আছি, প্লিজ আমাদের কেউ ভুল বুঝবেন না।’

এদিকে গতকাল দুপুরে ফেসবুক পেজে আরও একটি স্ট্যাটাস দেন কর্তৃপক্ষ। তাতে লেখেন, ‘নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা চাইলেও সিলেটে আসতে পারছি না। আমরা চাই একটা সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হোক। আর আপনারাই পারেন সেই পরিবেশ তৈরি করতে। সেদিন সিলেট থেকে ঠিক সময়ে বের হয়ে না আসতে পারলে পরদিন আমাদের লাশ বের হতো। ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয় আমাদের কাছে। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। অথচ মাসের শুরুতে ১ কোটি টাকা দিয়েছিলাম। প্রতি মাসে এভাবে নিজের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কোটি টাকা আমাকে দিতে বাধ্য করা হয়। এভাবে গত এক বছরে ১০ কোটি টাকা আমার কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ করা হয়। আজকে আমরা বিপদে পড়েছি, কে বা কারা আমাদের বিপদে ফেলল আপনারা একবারও বুঝতে চাইলেন না। উল্টো প্রতারক বলছেন।’ আঁখি সুপার শপ কর্তৃপক্ষের এ স্ট্যাটাসকে প্রতারণার আরেক কৌশল মনে করছেন গ্রাহকরা। তাদের সান্ত্বনা দিয়ে শান্ত রাখতে প্রতিষ্ঠানটি কোটি টাকা চাঁদা দেওয়ার গল্প তৈরি করেছে বলে মনে করছেন গ্রাহকরা।

সর্বশেষ খবর