মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

৩৬ বছরের বিরোধ জিততে মাকে খুন করে ছেলে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের শান্তিনগরের জোহারা খাতুনকে (৭৮) কুপিয়ে খুন করেন তাঁরই ছোট ছেলে জামির খাঁ। জমি নিয়ে ৩৬ বছর ধরে চলা বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে নিজেরা সুবিধা নিতেই এ হত্যাকান্ড। পুলিশের হাতে আটকের পর জামির হত্যা কথা স্বীকার করেছেন। হত্যায় ব্যবহৃত দা জামিরের ঘর থেকে উদ্ধারের পর সন্দেহ হলে পুলিশ তাকে আটক করে। পরিবারের মুখোমুখি করার পর জামির হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে জানান, বিরোধে অতিষ্ঠ হয়ে রাগের মাথায় এ কান্ড ঘটিয়েছেন। গতকাল দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলামের আদালতে জামির খাঁ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

রবিবার দুপুরে বৃদ্ধা জোহরা খাতুনকে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি শান্তিনগরের প্রয়াত রশিদ খাঁর স্ত্রী। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় জামিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিবেশী আত্মীয়রা এ হত্যাকান্ড ঘটায়। পুলিশ তৎক্ষণাৎ প্রতিপক্ষের তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাতে জামিরকে আটক করে। স্থানীয়রা জানান, রশিদ খাঁর সঙ্গে প্রতিবেশী আত্মীয় বজলু খাঁ পরিবারের জায়গা নিয়ে বিরোধ ছিল। আদালতের রায়ে রশিদ খাঁ পক্ষ জায়গাটি দখলে নেয়। রবিবার দুপুরে ওই জায়গার সীমানাপ্রাচীর ভেঙে রশিদ খাঁ পরিবারের ওপর হামলা চালানো হয়। বৃদ্ধার ছেলে জাহাঙ্গীর খাঁ জানান, জায়গা নিয়ে বিরোধে ফজল খাঁ, ইয়াছিন খাঁসহ আরও কয়েকজন হামলা চালায়। বাড়িতে ঢুকে তারা এ হত্যাকান্ড চালায়। শান্তিনগরের বাসিন্দা মোসলেম উদ্দিন জানান, পারিবারিক বিরোধে মারামারির খবর পেয়ে সেখানে তিনি ছুটে যান। হামলায় এক বৃদ্ধা মারা গেছেন বলে জানতে পারেন। ঘটনাস্থলে থাকা ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শিপন হায়দার বলেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধে চাচাতো নাতিসহ অন্যরা এ হামলা চালান বলে পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন। পুলিশ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাতে আরেক পক্ষের দুজনকে আটক করে নিয়ে যায় বলে জানতে পেরেছি। এদিকে বিশ্বস্ত এক সূত্র জানান, বিভিন্নভাবে তদন্ত করে পুলিশ হত্যার রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে। হত্যায় ব্যবহৃত দা নিহতের বাড়িতে পাওয়া গেলে সন্দেহ পাকাপোক্ত হয়। জামিরকে আটকের পরই ঘটনার মোড় ভিন্ন দিকে যেতে থাকে। পুলিশ কখনো কঠোর হয়ে কখনো কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। পরে পরিবারের সামনে এনে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে একপর্যায়ে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন। জামির পুলিশকে জানান, জায়গা নিয়ে বিরোধে তারা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ওঠেন। আদালতের রায় পেলেও তারা ভোগদখল করতে পারছিলেন না। রবিবার প্রতিপক্ষ বাড়ির দেয়াল ভাঙলে তাদের ফাঁসানোর জন্য হুট করে রাগের মাথায় মাকে হত্যা করেন। আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান গতকাল বিকালে জানান, সন্দেহ হলে জামিরকে থানায় আনা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে আদালতে পাঠানো হয়। আটক প্রতিপক্ষের তিনজনের বিরুদ্ধে বেআইনি দলবদ্ধ হয়ে আক্রমণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর