বুধবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

গোল্ড মনির ও রাজউক কর্মকর্তাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আলোচিত ব্যবসায়ী মনির হোসেন ওরফে গোল্ড মনির এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গতকাল দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শফিউল্লাহ বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।

মামলায় গোল্ড মনির ছাড়াও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন রাজউকের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অফিস সহায়ক পারভেজ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-১) নাসির উদ্দিন শরীফ, উপপরিচালক দিদারুল আলম, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর (এস্টেট ও ভূমি-১) আনোয়ার হোসেন, নিরীক্ষা ও বাজেট শাখার ঊর্ধ্বতন হিসাব সহকারী এস এম তৌহিদুল ইসলাম, এস্টেট ও ভূমি-১ শাখার কার্য তদারককারী মান-২ এর আলাউদ্দিন সরকার। এ ছাড়া মামলায় দক্ষিণখানের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন খানকেও আসামি করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ লাভ ও লোভের বশবর্তী হয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অফিস থেকে নিয়মানুযায়ী নথিসমূহ মুভমেন্ট রেজিস্টারে এন্ট্রি না করে এবং কাজ শেষে রেকর্ডরুমে না পাঠিয়ে সরকারি নথিপত্র কৌশলে সরিয়ে ও বিভিন্ন কর্মকর্তার সিল অবৈধভাবে তৈরি করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বে-আইনিভবে ভুয়া নথি তৈরি ও লিজ দলিল সম্পাদন করে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন।’

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদের নেতৃত্বে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ একটি টিম রাজউক এনেক্স ভবনের পঞ্চমতলার এ-৫১৪ নম্বর কক্ষে তল্লাশি করেন। তল্লাশির সময় ওই কক্ষ থেকে ৭০টি প্লটের নথি, একটি ল্যাপটপ, রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তার ১৫টি সিলসহ স্ট্যাম্প প্যাড, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র ১৭০টি, ডিমান্ড কালেকশন রেজিস্টার (ডিসিআর) বই একটি, চারটি লিজ ডিড-এর কপি, বরাদ্দপত্রের কপিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক মতিঝিল থানা পুলিশকে অবহিত করা হলে থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়। মতিঝিল থানার এসআই সফিকুল ইসলাম উদ্ধার করা আলামত জব্দ করেন।

দুদক সূত্র জানায়, তল্লাশিকালে ওই জব্দ করা রাজউকের মূল্যবান নথিপত্রের সঙ্গে মনির হোসেনের কর্মচারী হিসেবে পরিচিত মো. নাসির ও রাজউকের পিয়ন মো. পারভেজ চৌধুরীকে কর্মরত দেখা যায়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থল থেকে নাসির পালিয়ে যান। রাজউকের পিয়ন পারভেজ চৌধুরীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাজউক এনেক্স ভবনের পঞ্চমতলার এ-৫১৪ নম্বর কক্ষটি ১৯৮৬ সাল থেকে পলি ওভারসিজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ফজলুল হককে চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। পরিদর্শনকালে রাজউকের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ফজলুল হক ওই কক্ষের তিন ভাগের এক ভাগ জায়গা মনির হোসেনকে (গোল্ড মনির) সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। আটক হওয়া পারভেজ চৌধুরীও জানান, ফাইলগুলো গোল্ড মনিরের নির্দেশে রেকর্ডরুম ও সংশ্লিষ্ট সেকশন থেকে সংগ্রহ করে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ওই কক্ষে নেওয়া হয়েছিল।

আটকের পর পারভেজ চৌধুরী জানান, গোল্ড মনিরের নির্দেশে তিনিসহ জিন্নাহ ও নাসিরসহ আরও কয়েকজন মিলে ৭০টি নথি কৌশলে রাজউকের মূল ভবন থেকে এনেক্স ভবনের এ-৫১৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। কিন্তু রাজউকের ফাইল সংশ্লিষ্ট শাখা এবং রেকর্ডরুম ছাড়া অন্য কোথাও থাকার কথা নয়। নথিগুলো যে রুম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই রুমটি রাজউকের অফিস রুম নয়। পরে রাজউকের চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে রাজউকের দক্ষিণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে পারভেজ চৌধুরী, মনির হোসেন ওরফে গোল্ড মনির, জিন্নাহ ও নাসিরের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মামলটি পরে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, গোল্ড মনির অর্থ ও প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় সরকারি নথিপত্র কৌশলে সরিয়ে এবং বিভিন্ন কর্মকর্তার সিল তৈরি করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বে-আইনিভবে ভুয়া নথি তৈরি ও লিজ দলিল সম্পাদন করে রাজউকের বাড্ডা প্রকল্পের অর্ধশতাধিক প্লট আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর