বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বছরেও গুরুত্বপূর্ণ কমিটির বৈঠক হয়নি

৩৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

আকতারুজ্জামান

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের আইনের কোনো তোয়াক্কা করছে না। বছরের পর বছর আইন লঙ্ঘন করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এরমধ্যে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় এক বছরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটির কোনো বৈঠক করেনি। এসব কমিটির মধ্যে রয়েছে- বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট ও অর্থ কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ (৪৭তম) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে। ইউজিসি বলছে- অনিয়ম করতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই সভা করেনি। অভিযোগ রয়েছে- এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার বদলে ব্যবসাকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের আইন মেনে চলছে না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের বেপরোয়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা যদি অনলাইনে হতে পারে তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটির বৈঠকগুলো অনলাইনে হতে বাধা কোথায়? আসলে তারা সরকারের আইনকে থোড়াই কেয়ার করে। এই মনোভাব বন্ধ হওয়া দরকার। এভাবে আর বেশি দিন বিশ্ববিদ্যালয় চালানো যাবে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা দূর করতে বছরে অন্তত একবার সভার আয়োজন করবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন, হিসাব-নিকাশ অনুমোদন, বাজেট অনুমোদনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের। কিন্তু  বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এক বছরেও এই কমিটির কোনো বৈঠক অনুমোদন করেনি। এই তালিকায় রয়েছে- স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, টাইমস ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট ও ইন্টারন্যাশাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যাবলি এবং সাধারণ ব্যবস্থাপনা তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টি, নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নেওয়া, পরীক্ষা ও ফল অনুমোদনসহ যাবতীয় দায়িত্ব সিন্ডিকেটের। এই সিন্ডিকেট সভার সভাপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক বছরে এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটির বৈঠক করেনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিটি ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, ঈশাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, টাইমস ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি। শিক্ষা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সিন্ডিকেটকে সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল। কিন্তু এক বছরে একাডেমিক কাউন্সিলের কোনো বৈঠক করেনি সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি), নর্থইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অনুমোদনের দায়িত্ব অর্থ কমিটির। কিন্তু এক বছরে অর্থ কমিটির কোনো বৈঠক করেনি বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিটি ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি), নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনী ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদককে বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরেও গুরুত্বপূর্ণ এসব কমিটির বৈঠক হয় না, তাদের লেখাপড়া নয়, ব্যবসাই মূল উদ্দেশ্য। এক বছরেও গুরুত্বপূর্ণ কমিটির বৈঠক না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক অনিয়ম হয়। এই অনিয়মগুলো অব্যাহত রাখতেই তারা বৈঠকগুলো করে না। এ বিষয়ে সরকারকে কঠোর ভূমিকা পালন করা উচিত।

সর্বশেষ খবর