বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কুয়েট ছাত্রলীগ সম্পাদকসহ চারজন আজীবন বহিষ্কার

শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় সম্পৃক্ত ৪৪ শিক্ষার্থীকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি ও জরিমানা করেছে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটি। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে চার শিক্ষার্থীকে চিরতরে বহিষ্কার, সাত শিক্ষার্থীকে দুই শিক্ষাবর্ষ ও একজনকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও ২২ শিক্ষার্থীকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিষ্কার করা হলেও এখনই তা কার্যকর হচ্ছে না। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অপরাধে যুক্ত হলে এ শাস্তি কার্যকর হবে। এ ছাড়া ১০ শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চিরতরে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন- ছাত্রলীগ কুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), হাসান আবদুল কাইয়ুম (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), মোহাম্মদ কামরুজ্জামান রাজ্জাক (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) ও রিয়াজ খান নিলয় (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং)।

দুই শিক্ষাবর্ষের ২০১৯-২০ থেকে ২০২০-২১ চার টার্ম ও আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন- তাহমিদুল হক ইশরাক (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), মাহমুদুল হাসান (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), সাদমান সাকিব (লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং), মাহিন মুনতাসির (ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং), রাগিব আহসান মুন্না (লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং), মীর জামিউর রহমান (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) ও রুদ্র নীল সিংহ শুভ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট)। এক শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন আনিকুর রহমান (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং)। এ ছাড়া ২২ শিক্ষার্থীকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিষ্কার করা হলেও শর্ত সাপেক্ষে শাস্তি আপাতত স্থগিত থাকবে। তারা হলেন- ফয়সাল আহমেদ রিফাত, ইমরান হোসেন আওয়াল, খালিদ সাইফুল্লাহ শুভ্র, ফাইয়াজ রহমান, নূর মোহাম্মদ, নাইমুর রহমান অন্তু, সাবির জোয়ারদার, মাহবুবুর রহমান রাফি, আতিকুর রহমান, সাদিকুল ইসলাম, নাজমুস সাকিব সিফাত, গোলাম কিবরিয়া, ওসমান ফারুক, সাগর তরফদার, প্রান্ত কর্মকার, সাফাত হাসান, মানিক কুমার সরকার, আমিনুল ইসলাম, মুহিব্বীর হোসেন সরদার, ইমতিয়াজ আহমেদ, সাফায়েত মাহবুব ও আনোয়ার হোসেন সাকিব। আরও ১০ শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। তারা হলেন- আহসানুল আবেদীন, কবির হোসেন, শুভ মন্ডল, শাহরিয়ার আহমেদ মুশফিক, ফয়সাল কবির ফাহিম, শাফিন আহমেদ, আদনান ইসলাম, সাকিব সরদার, সানজিদুল ইসলাম ও সাদাফ হেলাল। ৩০ নভেম্বর বিকাল ৩টার দিকে কুয়েটের ইইই শাখার প্রফেসর ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. মো. সেলিম হোসেন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে সেলিম হোসেন কুয়েট ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর মানসিক নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। লালন শাহ হলে ডিসেম্বরে ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচন নিয়ে ড. সেলিম হোসেনকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিতে বিধিনিষেধ : শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনার জেরে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতিতে বিধিনিষেধ দেওয়া হচ্ছে। ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের সমাবেশ বা মিছিল করলে তা আগেই ছাত্রকল্যাণবিষয়ক পরিচালককে অবহিত করে তাঁর অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে ব্যানার বা পোস্টার লাগানো যাবে না। তবে শৃঙ্খলা কমিটি বা সিন্ডিকেট বৈঠকে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু বিধিনিষেধ দেওয়া ও ক্যাম্পাসে আচরণবিধি পালনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর