শুক্রবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

দ্বিতীয় টানেল হচ্ছে যমুনায়

এ বছরই শুরু হতে পারে মূল কাজ

মানিক মুনতাসির

দ্বিতীয় টানেল হচ্ছে যমুনায়

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হতে যাচ্ছে এ বছরই। এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে যমুনা নদীর তলদেশে দ্বিতীয় টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যার প্রাথমিক সমীক্ষাও করা হয়েছে। এখন বিশদ সমীক্ষা ও প্রাথমিক নকশার কাজ শুরুর অপেক্ষা। আশা করা হচ্ছে দ্বিতীয় টানেল নির্মাণ প্রকল্পের মূল কাজ এ বছরই শুরু হবে। তবে এর দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। একইভাবে কিছুদিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে কর্র্ণফুলী টানেল চালুর ক্ষণ গণনা। সেতু বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশের দ্বিতীয় টানেলটির নির্মাণ শুরু হতে যাচ্ছে যমুনা নদীর গভীরে। আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রকল্পের জন্য অর্থও বরাদ্দ রাখা হবে বলে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে আগামী বাজেট তৈরির প্রাথমিক কাজও শুরু করেছে অর্থ বিভাগ।

সূত্র জানায়, যমুনা নদীর নিচ দিয়ে দ্বিতীয় টানেল তৈরির প্রস্তুতি কাজ এরই মধ্যে এগিয়েছে অনেক দূর। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় এই প্রস্তুতিতে আরও গতি এসেছে। টানেল নির্মাণের পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ‘যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে সম্ভাব্য সমীক্ষা পরিচালনা’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১২২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির বিষয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রস্তাবিত পরামর্শক প্রাথমিক ব্যয়ও অনুমোদন করা হয়েছে।

এদিকে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, যমুনা নদীর ওপর দ্বিতীয় সেতু না করে টানেল নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, সরকার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার কথা ভাবছে। সেখানে টানেল নির্মাণ করা হলে প্রকল্পটি বেশি সাশ্রয়ী হবে বলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন। তবে সমীক্ষা না করে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তই নেবে না সরকার। পাশাপাশি যমুনা নদীর তলদেশেও একটি টানেল নির্মাণের পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মহামারি করোনাভাইরাসের বাধায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর গতি কিছুটা কমেছে। এমনকি যেসব প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে, যেগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে, সেগুলোতেও কিছুটা ধীরগতি বিরাজ করছে। এর প্রভাব পড়েছে যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের বিশদ সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রমেও। অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সম্ভাব্যতার জন্য বিশদ আর্থিক ও প্রকৌশলগত কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। এ নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য বালাশী-বাহাদুরাবাদ পয়েন্টকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে বিশদ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পর প্রস্তাবিত টানেলের প্রকৃত রুট চূড়ান্ত করা হবে। এ সমীক্ষার আওতায় প্রস্তাবিত টানেলের অবস্থান, অ্যালাইনমেন্ট ও দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা, প্রকল্পের বিভিন্ন উপ-অঙ্গের নির্মাণ পদ্ধতি নির্ধারণ, জিও টেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন, সিসমিক স্টাডি ও সার্ভে পরিচালনা, ট্রাফিক সার্ভে পরিচালনা, পরিবেশ ও পুনর্বাসন-সংক্রান্ত সমীক্ষা পরিচালনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, টানেলের প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন ও এর ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন, ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিশ্লেষণ, ক্রয়-পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি, ঝুঁকি মূল্যায়ন ও হ্রাসকরণের ব্যবস্থা চিহ্নিতকরণের কাজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে নদীর তলদেশে প্রথম টিউবটির ২৪৫০ মিটারের মধ্যে ২৪৩০ মিটার ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় টিউবটিও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া দুই প্রান্তের সংযোগ সড়ক, ওভারব্রিজ এবং সড়ক সম্প্রসারণের কাজ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ চলছে দ্রুততার সঙ্গে।

সর্বশেষ খবর