শনিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মধু আর সরিষায় স্বপ্ন বুনছে কৃষক

নজরুল মৃধা, রংপুর

মধু আর সরিষায় স্বপ্ন বুনছে কৃষক

মাঠের পর মাঠ হলুদ রঙে ভরে গেছে। চলছে মধু সংগ্রহের কাজ। শীতকালীন সোনার শস্য সরিষার খেত। ছবিটি তেঘড়িয়া সিরাজদিখান মুন্সীগঞ্জ থেকে তোলা -রোহেত রাজীব

মধু আর সরিষায় স্বপ্ন বুনছে রংপুর অঞ্চলের কৃষক। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষার। হলুদে হলুদে ভরে গেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। ভালো ফলন, ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকরা খেত পরিচর্যা করছেন। অনেকে বাড়তি আয় করছেন সরিষা খেতে মধু চাষ করে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী- এ পাঁচ জেলায় চলতি মৌসুমে ৩৮ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। এসব সরিষা খেতের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২ হাজার ৯৫০টি মৌমাছির বক্স স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর ২ হাজার ১৮৯টি মৌবক্স স্থাপন করে ২১ হাজার ৮০৬ কেজির বেশি পরিমাণ মধু উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া এসব জেলার বিভিন্ন আম বাগানে ২২২টি মৌবক্স স্থাপন করে আরও ৫ হাজার ৯০৪ কেজি এবং লিচু বাগানে ২৮৫টি মৌবক্স স্থাপন করে ৫ হাজার ৯০৪ কেজি মধু উৎপাদন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এবার গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। চাষ করা সব সরিষা খেত এবং আম ও লিচু বাগানে পরিকল্পিতভাবে মৌচাষ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রতি মৌসুমে শত কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদিত মধু অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

রংপুর সদরের উত্তম এলাকার কয়েকজন সরিষা চাষি জানান, বর্তমানে তাদের সরিষা খেতের বয়স হয়েছে ৪০ দিনের বেশি। আর দেড় থেকে দুই মাস পর ফসল ঘরে উঠবে। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবারও তারা সরিষা আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।

তারা জানান, সরিষা আবাদে অন্যান্য ফসলের চেয়ে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম এবং লাভ বেশি। মাত্র চারটি চাষ দিয়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। এ ছাড়া দুবার পানি ও একবার সার দিয়েই সরিষার আবাদ করা যায়। ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে এ ফসল ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন পাওয়া যায় ১ হাজার ৪০০ কেজির মতো। নভেম্বরের প্রথম থেকেই এ ফসল বপন করা হয় এবং ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সরিষা ঘরে তোলা যায়। প্রতি বিঘায় ফলন পাওয়া যায় পাঁচ থেকে ছয় মণ। বিঘায় খরচ পড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া মধু চাষ করলে বাড়তি আয় রয়েছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মাহবুবর রহমান জানান, রংপুর অঞ্চলে লিচু এবং আম বাগানসহ সরিষা খেতে মৌচাষ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম চলছে। এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৌচাষ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

সর্বশেষ খবর