শনিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
যমজ শিশুর একজনের মৃত্যু

হাসপাতাল মালিক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিল পরিশোধ সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে রাজধানীর শ্যামলীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যমজ শিশুর একজনের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। অন্য শিশুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যমজ দুই শিশুকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে তাদের মাকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে ওই হাসপাতালের মালিককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তিনি হলেন- আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ার (৫৭)।

গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বিল পরিশোধ সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যমজ শিশুকে জোর করে বের করে দেওয়ার পর আহমেদ নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। আরেক শিশু আবদুল্লাহকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, গত ৩১ ডিসেম্বর ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভোগা ছয় মাস বয়সী যমজ দুই শিশু আহমেদ ও আবদুল্লাহকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন মা আয়েশা বেগম। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শিশু দুটিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার কথা বলেন সোহরাওয়ার্দীর চিকিৎসকরা। তবে ওই হাসপাতালের দালালের খপ্পরে পড়ে কম খরচে ভালো চিকিৎসার প্রলোভনে গত ২ জানুয়ারি যমজ দুই সন্তানকে শ্যামলীর ?‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে’ নেন আয়েশা বেগম। সেখানে তিন দিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসার পর তাকে এক লাখ ২৬ হাজার টাকা বিলের কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে ওই টাকা জোগাড়ের সাধ্য নেই জানানোর পর আয়েশার সঙ্গে রাগারাগি করেন হাসপাতালের পরিচালকসহ দায়িত্বে থাকা অন্য কর্মকর্তারা। বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার-দেনা করে ৫০ হাজার ৫০০ টাকা জোগাড় করেন তিনি। এছাড়া সৌদি প্রবাসী স্বামীকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিক তিনি ১০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠান। সব মিলিয়ে ৬০ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। তবে তাতে সন্তুষ্ট হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত ৬ জানুয়ারি হাসপাতালের আইসিইউ থেকে যমজ দুই শিশুকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায় শিশু আহমেদ। আরেক শিশু আবদুল্লাহও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নির্মম ও অমানবিক ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। র‌্যাব তাৎক্ষণিকভাবে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। মা আয়েশা মোহাম্মদপুর থানায় আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক ও পরিচালককে আসামি করে একটি মামলা করেন। এরপর শুক্রবার বিকালে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আমার বাংলাদেশ হাসাপাতালের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারকে  গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, দীর্ঘ ২০-২২ বছর ধরে প্রায় ছয়টি বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত বছরের জানুয়ারিতে শ্যামলীতে আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল খুলে ব্যবসা শুরু করেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফুসলিয়ে ওই হাসপাতালে রোগী নেওয়া হতো। হাসপাতাল পরিচালনার বিধি মোতাবেক সার্বক্ষণিক তিনজন চিকিৎসক ডিউটিরত থাকার কথা থাকলেও সার্বক্ষণিক একজন ডিউটিরত থাকতেন। হাসপাতালটিতে দুটি আইসিইউসহ ৩০টি বেডের প্রাধিকার রয়েছে। অথচ তার হাসপাতালে ছয়টি আইসিইউ অর্থাৎ চারটি আইসিইউ বেশি। ভেন্টিলেটর রয়েছে দুটিতে। নয়টি এনআইসিইউ থাকলেও অনুমোদন ছিল একটির। মূলতঃ আইসিইউকেন্দ্রিক ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করে তিনি অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর