শনিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

মিশিগানে ডেপুটি মেয়র বাংলাদেশি কামরুল

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

মিশিগানে ডেপুটি মেয়র বাংলাদেশি কামরুল

‘আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে মার্কিন রাজনীতি আর প্রশাসনে জোরালো সম্পর্ক রচনার বিকল্প নেই’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মিশিগান স্টেটের ডেট্রয়েট আর হ্যামট্রামেক সিটির প্রবাসীরাও জোর কদমে এগিয়ে চলছেন। ২ নভেম্বরের নির্বাচনে হ্যামট্রামেক সিটি কাউন্সিলে দুই প্রবাসী জয়ী হয়েছেন। সেই সুফল এলো কাউন্সিলের ভোটেও। বাংলাদেশি কামরুল হাসান ডেপুটি মেয়র হলেন ৪ জানুয়ারির ভোটে। কাউন্সিলম্যান হিসেবে জয়ী অপর প্রবাসী হলেন নাঈম লিয়ন চৌধুরী। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সিটিতে বিভিন্ন মেয়াদে পোলিশ বংশোদ্ভূতরা মেয়র নির্বাচিত হলেও ২ নভেম্বরের নির্বাচনে ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত আমেরিকান আমির গালিব মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। ওই নির্বাচনে তিন মুসলিম কাউন্সিলরও জয়ী হন। মেয়র ও কাউন্সিলর মিলে সাত সদস্যবিশিষ্ট পুরো সিটি প্রশাসন এখন মুসলমানের কব্জায় বলে মিশিগানের সংবাদদাতা আশিক রহমান জানিয়েছেন।

ডেপুটি মেয়র কামরুল হাসান জানান, তার বাড়ি চট্টগামের চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে। তিনি মরহুম আমিনুল হক মেম্বারের ৪র্থ ছেলে। নিজ গ্রাম মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করে জোয়ারা বিসি হাইস্কুল থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি পাস করেন। তারপর গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে দেশের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৫ সালে গণিত বিষয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৯২ সালে মেধা তালিকায় ৫ম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রিতে অধ্যয়নের জন্য নিউইয়র্কে আসেন। প্রবাসে বিভিন্ন প্রতিকূলতা থাকার কারণে এ সম্মানজনক ডিগ্রি অর্জন করতে না পারলেও ২০০২ সালে মিশিগানের ডেট্রয়েট মারসি ইউনিভার্সিটিতে ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য ভর্তি হন। পাশাপাশি শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। মিশিগানে মাস্টারক্রাপ্ট, লেদারওয়ার্ক, ডিস্ট্রিয়া, ফারসিয়াসহ কয়েকটি কোম্পানির ম্যানেজারিয়াল পদসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্বখ্যাত ফোর্ড মোটরস কোম্পানির প্রসেস কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। এদেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইতে কামরুল বলেন, শুরুতেই আমাদের কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডসহ বাংলাদেশ-আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক ককাসের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। তারপর থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। ২০০৯ সালে হ্যামট্রামেক সিটির কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করি এবং প্রথম নির্বাচনেই জয়লাভ করি এবং আজ অবধি আছি। মাঝে কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় হ্যামট্রামেক সিটি মেয়র, ওয়েইন কাউন্টি কমিশনার ও স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন। কিন্তু প্রতিবারই সামান্য ভোটের জন্য কাক্সিক্ষত ফল আসেনি।

ডিপুটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় কমিউনিটির মানুষের জন্য কি করার আছে এবং নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি হয়তো আগামীতে এ সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। কারণ আমাদের কমিউনিটির অনেকেই আছেন আমাদের বা শহরের মানুষদের নিয়ে কাজ করার। আমি চেষ্টা করছি এবং করব তাদের মূলধারার রাজনীতি বা স্থানীয় প্রশাসনিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর। তবে একটা বিষয় ধ্রুব সত্য যে, আমাদের এ স্থানীয় নির্বাচনে দেশীয় আঞ্চলিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। যার কারণে কাক্সিক্ষত ফল পেতে অনেক বেগ পেতে হয়। নিজেদের স্বার্থে এগুলো পরিহার করতে হবে। সম্প্রতি আমাদের মধ্যে ঐক্য বৃদ্ধির জন্য একটি সংগঠন তৈরি করেছি। আশা করি সামনের যে নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করি না কেন আমরা আমাদের ফলাফল পাব।

উল্লেখ্য, আমেরিকার ইতিহাসে বাঙালিদের মধ্যে যে কোনো সিটি প্রশাসনে প্রথম কাউন্সিলর সাহাব আহমেদ সুমীন যিনি হ্যামট্রামেক সিটিতে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৮ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র গ্যারি জিকের সঙ্গে ডেপুটি মেয়র হিসেবে এবং আরেক কাউন্সিলর এনাম মিয়া ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান ডেপুটি মেয়র কামরুল হাসানের এ সফলতায় মিশিগানে বাংলাদেশিদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস চলছে।

সর্বশেষ খবর