রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

নিখোঁজদের সন্ধান মিলছে না নদীপাড়ে স্বজনদের বিক্ষোভ

লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলারডুবি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

ফতুল্লায় ধলেশ্বরী নদীতে লঞ্চ এমভি ফারহান-৬-এর ধাক্কায় ট্রলার ডুবে নিখোঁজ নয়জনের সন্ধান ৮০ ঘণ্টা পরও মেলেনি। খোঁজ পাওয়া যায়নি ডুবে যাওয়া ট্রলারটিরও। এ অবস্থায় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তুলে নদীপাড়ে বিক্ষোভ করেছেন স্বজনরা। একপর্যায়ে নদীপাড় এলাকার ঘাটের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় ধলেশ্বরীর ধর্মগঞ্জ খেয়াঘাটে খেয়া পারাপার। আতঙ্কে নদীতে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের লোকজন তীরে আসেননি। গতকাল দুপুর ১২টায় এ ঘটনা ঘটে।

নিখোঁজ মাদরাসাছাত্র আবদুল্লাহর (২২) মামা কায়সার মিয়া বলেন, ‘চার দিন হলো ট্রলার ডুবেছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ উদ্ধারকারী কোনো সংস্থারই তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা স্পিডবোটে নদীতে ঘুরে-বসে সময় কাটান। এভাবে পানির নিচ থেকে কিছুই উদ্ধার করা যাবে না।’

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ট্রলারডুবি তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রিফাত ফেরদৌস গতকাল বিকালে বলেন, ‘নদীর পানির নিচে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় লাশ ফ্রিজিং হয়ে যাওয়ার কথা। আমরা এ নিয়ে চিন্তায় আছি। কারণ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনরা যে কোনো মূল্যে নিখোঁজদের সন্ধান চান। নদীর নিচে একটি নৌকা দেখা গেছে। সেটি ডুবে যাওয়া ট্রলার কি না বোঝা যাচ্ছে না। সেটি উত্তোলনে সময় লাগছে। কিন্তু লাশ কোথায় গেল তা খুঁজতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘নদীর পাড়ে অপেক্ষারত স্বজনদের কিছু অতি উৎসাহী লোক উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন। এতে আমাদের উদ্ধার কাজে সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা সফল হব। যতক্ষণ ট্রলার ও নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়া না যাবে ততক্ষণ আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীতে ঢাকাগামী এমভি ফারহান-৬ লঞ্চ বেপরোয়া গতিতে এসে ৪০-৫০ জন যাত্রীসহ একটি ট্রলারকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ট্রলারের নয় যাত্রী নিখোঁজ হন। তারা হলেন- মাদরাসাছাত্র আবদুল্লাহ (২২), মোতালেব (৪২), কলেজছাত্র সাব্বির (১৮), চরমধ্যনগরের সোহেল মিয়ার স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩০), তার দুই মেয়ে তাসমিন আক্তার (১০), দেড় বছরের তাসফিয়া আক্তার ও ছেলে মাদরাসাছাত্র তামিম (৮) এবং উত্তর গোপালনগর মসজিদের মুয়াজ্জিন আবদুল্লাহ ও আওলাদ হোসেন (৩২)। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত ফেরদৌসকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার দিন রাতেই নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর নৌ-নিরাপত্তা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবুলাল বৈদ্য বাদী হয়ে ঘাতক লঞ্চ এমভি ফারহান-৬-এর মাস্টার, চালক ও সুকানির বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় লঞ্চের মাস্টার কামরুল হাসান (৪০), ইনচার্জ ড্রাইভার জসিম উদ্দিন ভুইয়া (৪০) ও সুকানি জসিম মোল্লাকে (৩০) আটক করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর