রবিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ আদায়ে পদক্ষেপ জনতা ব্যাংকের

বাংলাদেশ ব্যাংকের সায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণ আদায়ে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটির এ পদক্ষেপে সায় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ আদায়ে অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এ সায় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে ঋণগ্রহীতা গ্রুপটি পুনঃ তফসিলের জন্য প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়েছে। অ্যাননটেক্স আগামী সপ্তাহে আরও ২৫ কোটি টাকা জমা দেবে বলে জানিয়েছে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ঋণ আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের নিয়ে একটি বিশেষ টিম গঠন করেছে। জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অ্যাননটেক্স গ্রুপের ঋণগুলো দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী থাকায় জনতা ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে। তা পুনঃ তফসিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রস্তাবনা পাঠায়। এ ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ আদায়, দুদকের ছাড়পত্র ও করোনা মহামারিতে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন-জীবিকা বিবেচনায় এনে কিছু শর্ত আরোপ করে ইতিবাচকভাবে সায় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে থেকেই ঋণগ্রহীতা অ্যাননটেক্স ঋণগুলো পরিশোধে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

সূত্রমতে, এসব কারণ ছাড়াও বৃহৎ খেলাপি ঋণের অতীত কার্যকলাপ পর্যালোচনায় নেওয়া হয়েছে। হলমার্ক গ্রুপসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ রেখে খেলাপি ঋণ আদায়ে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনি পদক্ষেপ নিয়েও  হলমার্কের খেলাপি ঋণ আদায় এখনো সম্ভব হয়নি। তাই অ্যাননটেক্সের ঋণ আদায়ে পুনঃ তফসিল সমীচীন হয়েছে বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একাধিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ঋণটি পুনঃ তফসিলের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে  চলমান কভিড পরিস্থিতিতে যেখানে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন, সেখানে নির্ভরশীল পরিবারগুলোর একমাত্র উপার্জনের উৎসস্থল বন্ধ না করে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা চালু রেখে ঋণ আদায়ের সিদ্ধান্ত ব্যাংক ও রপ্তানি খাতে নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ দিলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক পৃথকভাবে অ্যাননটেক্স গ্রুপের কার্যকলাপ কঠোর মনিটরিংয়ে রাখতে হবে।  

সম্প্রতি জনতা ব্যাংকের উদ্দেশে ইস্যু করা এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, লামিসা স্পিনিং লিমিটেড, জারা ডেনিম লিমিটেড, সিমরান কম্পোজিট লিমিটেড, গ্যালাক্সি সুয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডাইং লিমিটেডসহ অ্যাননটেক্স গ্রুপভুক্ত ১৭টি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের ঋণ স্থিতি ৩ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ডাউন পেমেন্ট বাবদ আদায়কৃত ৭১ কোটি ৬৪ লাখ সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবসমূহে জমাকরণের পর পুনঃ তফসিল সুবিধাটি কার্যকর হবে। অ্যাননটেক্স ও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর গত সাড়ে সাত বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি ২৩ লাখ টাকারও বেশি পরিশোধ করেছে। ২০১৪ সালে অ্যাননটেক্স গ্রুপ জনতা ব্যাংককে ১৯২ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এরপর ২০১৫ সালে ২৩৬ কোটি, ২০১৬ সালে ২৯৬ কোটি, ২০১৭ সালে ৩৪২ কোটি, ২০১৮ সালে ২৮৬ কোটি, ২০১৯ সালে ৮৬ কোটি এবং ২০২১ সালে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কভিড মহামারিতে ইতিমধ্যে অ্যাননটেক্স গ্রুপ ৮৬ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। আরও ২৫ কোটি টাকা আগামী সপ্তাহে জমা দেবে বলে গ্রাহক সম্মতি জানিয়েছে। এ জন্য ঋণ তদারক ও আদায়ে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠন করেছে। কঠোর নজরদারি ও নার্সিংয়ের মাধ্যমে ঋণ আদায়ে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সতর্ক থেকে ঋণের তথ্য দফায় দফায় হালনাগাদ রাখছে। এ ছাড়া জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ না পাওয়ায় দুদক অভিযোগের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছে। অ্যাননটেক্স গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জামানত প্রদান না করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় শত শত কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে আত্মসাৎ-সংক্রান্ত যে অভিযোগ করা হয়েছিল তা দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে প্রমাণ হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আবদুছ ছালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কারখানাগুলো বন্ধ না রেখে ঋণ আদায়ের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ব্যাংকের খেলাপির অর্থ আদায়ের এ উদ্যোগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সায় দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধে যথেষ্ট আন্তরিক। ঋণগুলো নিয়মিত হলে ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ ও প্রভিশন কমে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সর্বোপরি অ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান বহাল থাকবে। নতুন নতুন বিনিয়োগে ব্যাংকের ব্যবসাও সম্প্রসারিত হবে। আমাদের খেলাপি আদায় নিয়ে অতীত অভিজ্ঞতা হলো, কোনো উৎপাদনমুখী কারখানা বন্ধ রেখে ঋণ আদায় সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে অ্যাননটেক্সের বিষয়ে উদ্যোগ ঋণ আদায় সহজ হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর