সোমবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
সুরভী-৯ লঞ্চে আগুন

যাত্রীদের মারধর, দুই সাংবাদিক লাঞ্ছিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে আগুন আতঙ্কে মেঘনা নদীতে যাত্রা বিলম্ব হওয়া এমভি সুরভী-৯ লঞ্চে যাত্রীদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে বরিশাল নদীবন্দরে নোঙর করার আগে লাঠিসোঁটা দিয়ে যাত্রীদের নির্যাতন করেন লঞ্চটির শ্রমিক-

 কর্মচারীরা। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা নদীবন্দরে গিয়ে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র তুলতে গেলে দুজন ক্যামেরাপারসনকে মারধর করেন হামলাকারীরা। এ সময় ক্যামেরার লাইট ভেঙে যায়। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সুরভী লঞ্চের ম্যানেজার মো. মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সুরভী লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। হামলার ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা। পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি সুরভী-৯ লঞ্চটি শনিবার রাত ১১টার দিকে মেঘনা নদী অতিক্রমকালে সাইলেন্সার পাইপে লাগানো তাপনিরোধক (পলেস্তার) প্রলেপ থেকে বাষ্পীয় ধোঁয়া বের হয়। এতে যাত্রীদের মধ্যে আগুনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রীদের মধ্যে কেউ জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। ওই রাতেই কোস্টগার্ডের একটি দল মাঝ নদীতে লঞ্চে গিয়ে ধোঁয়ার উৎস খুঁজতে থাকে। তারা লঞ্চটিকে মেঘনার মোহনপুর এলাকায় নোঙর করতে বাধ্য করে। পরে চাঁদপুর নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ইঞ্জিন পরীক্ষা করার পর গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার পরে লঞ্চটি মেঘনার মোহনপুর থেকে বরিশালের উদ্দেশে রওনা করে। রাতভর অনেক যাত্রী তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি নিজ নিজ ফেসবুক পেজে লাইভ করেন। অনেকে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করেন। লাইভ ও ফেসবুকে যাত্রীরা লঞ্চের সার্ভিস নিয়ে নানা মন্তব্য করেন। এর জের ধরে গতকাল সকালে লঞ্চটি বরিশাল নদীবন্দরে পৌঁছলে লঞ্চের ম্যানেজার মো. মিজানের নেতৃত্বে শ্রমিক-কর্মচারীরা বেশ কয়েকজন যাত্রীকে মারধর করে। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা নির্যাতনের ছবি তুলতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় তারা। হামলায় ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন দেওয়ান মোহন ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপারসন রুহুল আমীন আহত হন। ভেঙে যায় মোহনের ক্যামেরার লাইট। যাত্রী ও সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র লঞ্চের নিজস্ব সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়। নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক রুহুল আমীন জানান, বিনা কারণে যাত্রীদের ওপর হামলা করেছেন লঞ্চের শ্রমিক-কর্মচারীরা। সেই ছবি তুলতে গেলে হামলা চালানো হয় তাদের দুজনের ওপর। এতে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। নির্যাতিত সাংবাদিকরা এ ঘটনার বিচার দাবি জানান। বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) বলেন, তাদের সামনেই ঘটেছে যাত্রী ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা। এ ঘটনায় নির্যাতিত কেউ আইনি পদক্ষেপ নিলে তাদের সহায়তা করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে এর আগেই পালিয়ে যান হামলাকারীরা। এ ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) শারমিন সুলতানা রাখী। এদিকে যাত্রী এবং সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছে সুরভী নেভিগেশন গ্রুপের পরিচালক মো. রেজিন-উল কবির। নির্যাতনের ঘটনায় লঞ্চের ম্যানেজার মিজানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কেউ আইনগত পদক্ষেপ নিলে কর্তৃপক্ষের আপত্তি থাকবে না বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বরিশালের সাংবাদিক নেতারা। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারসহ কঠোর বিচার দাবি করেন বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন, বরিশাল ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিইমজা) সভাপতি ফিরদাউস সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন সুমন, সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন এবং বরিশাল টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোবিন্দ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন সুমনসহ অন্যরা। বরিশাল নদীবন্দরে যাত্রী ও সাংবাদিক নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের ইঞ্জিন ত্রুটিমুক্ত না করা পর্যন্ত এর যাত্রা বাতিল করেছে বিআইডব্লিউটিএ। গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় বিআইডব্লিউটিএর নির্দেশে ওই লঞ্চের যাত্রা বাতিল করা হয়। বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর