সোমবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু

হিমাংশু ও তার স্ত্রীকে এক চিতায় দাহ, তদন্ত কমিটি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া হিমাংশু বর্মণ (৩৫) ও বাড়িতে খুন হওয়া তার স্ত্রী সাবিত্রী রানীকে (৩০) একই চিতায় দাহ করা হয়েছে। শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে রাত ১১টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে প্রথমে হিমাংশু বর্মণ ও পরে সাবিত্রী রানীর মরদেহ স্থানীয় শ্মশানে দাহ করা হয়। এদিকে থানায় সাবিত্রীর স্বামী হিমাংশুর মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব কাদমা এলাকায় হিমাংশুর স্ত্রী সাবিত্রী রানী নিজ বাড়িতে খুন হন বলে জানতে পারেন এলাকাবাসী। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে হিমাংশুকে তার স্ত্রীর মরদেহের পাশে দেখতে পান। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হাতীবান্ধা থানার ওসি এরশাদুল আলমসহ একদল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হন। পরে ওই মরদেহসহ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হিমাংশু ও তার বড় মেয়ে পিংকীকে (১৩) থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ওইদিন শুক্রবার বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে থানা পুলিশ হিমাংশুকে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের দাবি হিমাংশু থানার একটি কক্ষে গলায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের তার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

 

তবে হিমাংশুর বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মণের দাবি, ‘পুলিশ তার ছেলের কাছে ১ লাখ টাকা চেয়েছিল বিষয়টি মীমাংসার জন্য। সেই টাকা দিতে না পারায় পুলিশ তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবিত্রী রানী প্রায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাদের ঘরে এবার ছেলে আসবে বলে চিকিৎসকের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিলেন হিমাংশু-সাবিত্রী দম্পতি। কিন্তু গত শুক্রবার ভোরে সাবিত্রী খুনের শিকার হওয়ায় সেই অনাগত সন্তান যেমন পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি, তেমনি পুলিশ হেফাজতে বাবা হিমাংশুর মৃত্যুর পর ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে দুই শিশু পিংকী ও প্রেয়সীর জীবনে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে মায়ের লাশের সঙ্গে হিমাংশু ও তার বড় মেয়ে পিংকীকে হাতীবান্ধা থানায় নিয়ে আলাদা আলাদা কক্ষে রাখা হয়। শিশু পিংকী বলে, থানায় বাবার সঙ্গে একবারও দেখা করতে দেওয়া হয়নি। ওইদিন বিকালে থানায় বাবা মারা গেলেও তাকে জানানো হয়েছে অনেক রাতে। বলতে বলতে হাঁউমাউ করে কাঁদতে থাকে পিংকী।

হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, ‘হিমাংশু থানার কক্ষে থাকা ওয়াই-ফাই-এর তার গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার পরিবারের কাছে কোনো টাকা চাওয়া হয়নি। এগুলো সত্য নয়।’

এদিকে হিমাংশু বর্মণের থানায় মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফা জামানকে প্রধান করে ডিবি পুলিশের ওসি আমিরুল ইসলাম ও কোর্ট ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্য করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা এ তথ?্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, ওই কমিটি তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর