বুধবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে সংশোধন হচ্ছে সালিশ আইন

আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তিতে গতি আনার লক্ষ্য

আরাফাত মুন্না

আদালতের বাইরে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে গতি আনতে প্রচলিত সালিশ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংশোধিত আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে আইন কমিশন। প্রস্তাবিত খসড়ায় সালিশি কার্যক্রমে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে সালিশকারীদের ফি, সালিশ ও আদালতের ক্ষেত্র, ট্রাইব্যুনালের আওতা ও নিষ্পত্তির সময়সীমা সুস্পষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলেপমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) অনুরোধে আইন কমিশন সুপারিশমালাসহ প্রস্তাবিত সংশোধিত খসড়া প্রস্তুত করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রচলিত সালিশ আইন অনেকটা অকার্যকর হয়ে গেছে। পাশাপাশি এই আইনে অনেক ধরনের অস্পষ্টতা ও সীমাবদ্ধতা থাকায় জনগণ আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এ জন্য আইনটি সংশোধনের জন্য বিআইডিএ আইন কমিশনে আবেদন জানায়। তাদের আবেদনের ভিত্তিতে দীর্ঘ গবেষণা শেষে সালিশ আইনের যুগোপযোগী সংশোধনীর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায়, সালিশ দায়েরের পর ৩৬৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হয়েছে। দাবিদার কর্তৃক দাবির আবেদন দাখিলেও ৩০ কার্যদিবসের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। খসড়ায় আদালত, আপিল বিভাগ, সালিশ, সালিশি ট্রাইব্যুনালসহ অন্যান্য বিষয়ে সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ও কার্যক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০১৮ সালের মে মাসে প্রথমিক খসড়া প্রস্তুতের পর এর অনুলিপির ওপর মতামত গ্রহণের জন্য সেটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিচার-সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে সালিশ আইনের সংশোধনী প্রস্তাব চূড়ান্ত করে আইন কমিশন। ৩০ ডিসেম্বর সংশোধিত আইনের খসড়াটি কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি আইন মন্ত্রণালয় ও বিআইডিএতেও পাঠানো হয়েছে খসড়াটি।

প্রস্তাবিত খসড়ায় সালিশি ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার, সালিশি চুক্তি, রোয়েদাদ ও কার্যধারা পরিসমাপ্তি, সালিশি রোয়েদাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, কতিপয় বিদেশি সালিশি রোয়েদাদের স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন এবং আপিলসহ নানা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে বিদ্যমান আইনে অস্পষ্টতা থাকায় বর্তমানে সালিশি কার্যক্রম পরিচালনায় নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। কমিশনের সংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত খসড়ায় এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা অনেকাংশে কমে আসবে। প্রস্তাবিত আইনের ২৩ ধারায় বলা হয়েছে, সালিশি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল থাকবে। ওই ট্রাইব্যুনাল ন্যায়সঙ্গত পক্ষপাতহীনভাবে দায়িত্ব পালন করবে। এই ট্রাইব্যুনালের অধিবেশনের প্রথম তারিখ হতে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে দাবিদার পক্ষ তাদের দাবির আবেদনপত্র দাখিল করবে।  এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো আইনে যাই থাকুক না কেন সালিশি পরিষদ সালিশ দায়েরের ৩৬৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবেন। তবে কোনো পক্ষ হতে লিখিত আবেদন পাওয়া গেলে নিষ্পত্তির সময়সীমা সর্বোচ্চ ৬০ কার্যদিবস বাড়ানো যাবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ৭ (ক)-এর ৬ উপধারা সংশোধন করে প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, সালিশ কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই যদি কোনো এক পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বা ক্ষেত্রমতে উচ্চ আদালত এই ধারার আওতায় কোনো অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয় তাহলে ওই আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে সালিশি কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এর ব্যর্থতায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বাতিল হয়ে যাবে যদি না কোনো পক্ষের আবেদনে আদেশ বর্ধিত করা হয়।

সর্বশেষ খবর