বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা

টানা ১১ দিন সংক্রমণ বৃদ্ধি। ১৩৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার, এক দিনেই বাড়ল ২.৭১ শতাংশ। ১৩১ দিনের মধ্যে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত। ১৮ জেলায় শনাক্তের হার ১২ শতাংশের ওপরে

শামীম আহমেদ

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা

করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে নমুনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশে আছড়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ। ১১ দিন ধরে টানা বেড়েছে সংক্রমণ। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার প্রায় সাড়ে চার মাস পর আবারও ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গত এক দিনেই বেড়েছে ২.৭১ শতাংশ। ১৩১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। কয়েকটি জেলায় শনাক্তের হার উঠে গেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। যশোরে আরও তিনজনের দেহে শনাক্ত হয়েছে করোনার নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ৯৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৯১৬ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সবশেষ এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের খবর আসে গত ৩ সেপ্টেম্বর। ওই দিন শনাক্ত হয় ৩ হাজার ১৬৭ জন করোনা রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১১.৬৮ শতাংশ। সবশেষ এর চেয়ে বেশি ১১.৯৫ শতাংশ শনাক্ত হারের খবর দেওয়া হয় গত ৩১ আগস্ট। গত ১ জানুয়ারি নমুনা পরীক্ষায় ২.৪৩ শতাংশ শনাক্ত হারের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। টানা ১০ দিন সংক্রমণ বেড়ে ১১ জানুয়ারি শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৮.৯৭ শতাংশে। এক দিনের ব্যবধানে গত ২৪ ঘণ্টায় ২.৭১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৬৮ শতাংশে। এ ব্যাপারে জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সরকারের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা দলের সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এক দিনে আড়াই শতাংশের বেশি শনাক্তের হার বৃদ্ধির অর্থ পরিস্থিতি ভয়াবহ। সারা পৃথিবীতে তৃতীয় ঢেউ চলছে, বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। সংক্রমিত রোগীদের কতভাগ ওমিক্রণে আক্রান্ত তাও যাচাই করতে পারছি না। শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ালেই বুঝতে হবে ভাইরাসটির সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। এখন তো প্রায় ১২ শতাংশ। সংক্রমণ প্রতিহত করতে এখনই সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। কিন্তু, ‘দেখি না কী হয়’ এমন একটা প্রবণতা আমাদের রয়েছে। এই দেখতে দেখতেই অবস্থা বেগতিক হয়ে যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ এখন ঢাকা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগেই শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪২৪ জন রোগী। শনাক্তের হার ১২.৭৮ শতাংশ, যা দেশের গড় হারের চেয়ে ১.১০ শতাংশ বেশি। ঢাকা জেলায় শনাক্তের হার ১৩.২৮ শতাংশ। অন্য বিভাগগুলোয় শনাক্তের হার যথাক্রমে ময়মনসিংহে ১১.১১ শতাংশ, রাজশাহীতে ৯.৫৯ শতাংশ, খুলনায় ৮.৭৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮.৭০ শতাংশ, বরিশালে ৭.৪৮ শতাংশ, রংপুরে ৫.১৯ শতাংশ ও সিলেটে ৫.১৭ শতাংশ।

১৫ জেলায় মেলেনি রোগী : দেশের করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যেও গত ২৪ ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, ভোলা, পিরোজপুর ও সুনামগঞ্জ জেলায় কোনো করোনা রোগী পাওয়া যায়নি। অবশ্য এই ১৫ জেলার মধ্যে সুমানগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শরীয়তপুরে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।

১৮ জেলায় শনাক্তের হার বেশি : গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮টি জেলায় শনাক্তের হার ছিল ১২ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে মাগুরায় একজনের পরীক্ষায় একজনই পজিটিভ পাওয়া যায়। শেরপুরে ১৫টি পরীক্ষায় শনাক্ত ছয়জন। শনাক্তের হার ৪০ শতাংশ। যশোরে ১০৯টি পরীক্ষায় শনাক্ত ৩০ জন। শনাক্তের হার ২৭.৫২ শতাংশ। এ ছাড়া ঢাকা জেলায় ১৩.২৮ শতাংশ, জামালপুরে ১৭.৮৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১২.৪০ শতাংশ, বান্দরবানে ২১ শতাংশ, লক্ষ্মীপুরে ২০.৮৩ শতাংশ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০ শতাংশ, রাজশাহীতে ১২.১৫ শতাংশ, বগুড়ায় ১৫.৭৩ শতাংশ, জয়পুরহাটে ১২ শতাংশ, ঝিনাইদহে ১৫.৫৫ শতাংশ, বরগুনায় ১৫.৩৮ শতাংশ, ঝালকাঠিতে ২০ শতাংশ, হবিগঞ্জে ২২.৮১ শতাংশ ও মৌলভীবাজারে ১৬.৬৭ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে দেশে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ১১১ জনে। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬ লাখ ১ হাজার ৩০৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৫৩ জন।

যশোরে তিনজনের ওমিক্রন শনাক্ত : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে পরীক্ষায় দুই ভারতীয় নাগরিক ও একজন বাংলাদেশির শরীরে ওমিক্রণ শনাক্ত হয়েছে। গতকাল এ তথ্য জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনজনের তথ্য জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (জিআইএসএআইডি) ডাটাবেজে জমা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় জিআইএসএআইডির ডাটাবেজে বাংলাদেশে মোট ৩৩ জন ওমিক্রন রোগী শনাক্তের তথ্য জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর