বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে উপজেলা পরিষদ

তিন বছর পর জাতীয় কমিটির বৈঠক আজ

উবায়দুল্লাহ বাদল

প্রায় অকার্যকর উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পাশ কাটিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) হস্তান্তরিত ১৭টি দফতরের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা দেওয়ায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটটি। উপজেলা চেয়ারম্যানদের অভিযোগ, আইনে দেওয়া চেয়ারম্যানের ক্ষমতা পরিপত্র জারির মাধ্যমে ইউএনওকে দেওয়া হয়েছে। ফলে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েও তারা কাক্সিক্ষত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছেন না। নিজেদের ক্ষমতা ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন’। রায় নিজেদের পক্ষে পেলেও এখনো তারা ফিরে পাননি কাক্সিক্ষত ক্ষমতা। এমতাবস্থায় সংবিধান, আইন ও আদালতের রায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দিয়েছেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর পর উপজেলা চেয়ারম্যানদের দাবি ও আদালতের রায় পর্যালোচনা করতে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ‘উপজেলা পরিষদ হস্তান্তরিত বিষয়ে কার্যক্রম পর্যালোচনা, পরামর্শ প্রদান এবং নির্দেশনা জারি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে আজ অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন কমিটির সভাপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সভায় জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগসহ ১৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে থাকতে বলা হয়েছে। আলোচ্যসূচিতে উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের দাবি এবং আদালতের হওয়া দুটি রিটের রায় সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহকারী কমিশনার (ফাইন্যান্স অফিসার) পদের কর্মপরিধি এবং পিএসসির পরামর্শ অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ কর্মচারী (চাকুরি) বিধিমালা সংশোধনী প্রস্তাব আজকের বৈঠকে উপস্থাপন হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকারের নীতিনির্ধারকরা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো আরও শক্তিশালী করতে চান। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একাধিক আইন সংশোধন করা হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যানদের করা রিটে আদালতের রায় বাস্তবায়নের বিষয়টিও ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও উপজেলা পরিষদকে অধিকতর কার্যকর করতে উপজেলা চেযারম্যানের ক্ষমতা ব্যবহারের মাত্রা বা কার্যপরিধি নির্ধারণ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ফলে জাতীয় কমিটির বৈঠক থেকে আদালতের রায় বাস্তবায়ন ও উপজেলা পরিষদ আরও অধিকতর কার্যকর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ ছাড়া বৈঠকে উপজেলা পরিষদে নতুন করে সহকারী কমিশনার (ফাইন্যান্স অফিসার) নিয়োগ, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধন নিয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন অর রশীদ হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইনানুযায়ী উপজেলা পরিষদের কাছে ১৭টি বিভাগ হস্তান্তরিত। একাধিক গেজেট ও প্রজ্ঞাপনে এসব বিভাগের কার্যক্রম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে সম্পাদন করার কথা বলা হলেও গত ১২ বছর ধরে তা অনুসরণ করা হচ্ছে না। এমনকি হাই কোর্ট ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও আজ অবধি উপেক্ষিত। আমরা এ বিষয়ে আদালতের রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা বিদ্যমান আইন ও বিধির ক্ষমতাবলেই উপজেলা পরিষদ পরিচালনা করতে চাই। আশা করছি, নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানরাই উপজেলা পরিষদ পরিচালনা করবেন।

সর্বশেষ খবর