শনিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্ষোভ-লজ্জার প্রকাশ হিসেবে তরুণীরা এমন করে

-ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার

ক্ষোভ-লজ্জার প্রকাশ হিসেবে তরুণীরা এমন করে

‘পাশ্চাত্যে দেখা যায় আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষ ও বয়স্করা। আর বাংলাদেশে নারী এবং কম বয়সীরা বেশি আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা নিয়ে বাংলাদেশে যে গবেষণাগুলো প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায় যে, এর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিক চাপে একজন আত্মহত্যা করছে। ক্ষোভের বা লজ্জার প্রকাশ হিসেবে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। সাধারণত বিষ খেয়ে বা ফাঁস নিয়ে তারা আত্মহত্যা করে।’ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। এই অধ্যাপক বলেন, আমাদের ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়ে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই মানসিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু কম বয়সীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুব তুচ্ছ ঘটনার জেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। হতাশা সহ্য করতে না পারার জন্যই কম বয়সী মেয়েরা এমনটি করে। তিনি বলেন, সাধারণত বর্তমানে বেশির ভাগ শিশুই একক পরিবারে বেড়ে উঠছে। এই শিশুরা একক মনোযোগ পেয়ে অভ্যস্ত। কোনো কিছু ভাগ করে নেওয়া বা একটি সমস্যাকে মোকাবিলা করার বিষয়গুলোতে তারা খুব বেশি অভ্যস্ত নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে দেখি যে, শিশুদের খুব আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করলেও তাদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে অভিভাবকরা সে অর্থে ভূমিকা রাখেন না। শিশুরা লেখাপড়ায় কীভাবে ভালো করবে- সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হলেও তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হয় না। ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের সমাজে শিশুদের মানসিক বিকাশের বিষয়টি সমস্যাযুক্তই থেকে যাচ্ছে। এর ফলে শিশুরা খুব তুচ্ছ কারণেই আত্মহত্যা করছে। এ ছাড়াও মডেলিং এবং দেখে দেখে শিখে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর দেখেও অনেক মেয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হচ্ছে।

এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে শিশু-কিশোরদের বিকাশের ওপর নজর দিতে হবে বলে এ অধ্যাপক মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা খুব বেশি পরীক্ষাকেন্দ্রিক ও প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়েছি। আমাদের আকাক্সক্ষাগুলো খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশ স্বাস্থ্যকর হয় না। এতে তারা সহজেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, আর হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে সহজ পথ খুঁজে নেয়; যার ধারাবাহিকতায় তারা আত্মহত্যা করতে চায়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের জাতীয় পর্যায়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষাক্ষেত্র এবং পারিবারিক লালন-পালন প্রক্রিয়াসহ সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র কেমন হওয়া উচিত- এগুলো নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর