শনিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

তবু গণপরিবহনে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

শামীম আহমেদ

তবু গণপরিবহনে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

ওমিক্রনের উর্ধ্বমুখীতেও মানা হচ্ছে না বিধিনিষেধ। গতকাল ফার্মগেট এলাকা থেকে তোলা -জয়ীতা রায়

লাগাম ছাড়াচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। ১৪১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। তবু গণপরিবহন থেকে হাট-বাজার কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করলেও তোয়াক্কা করছে না কেউ। গণপরিবহনে সবার মাস্ক পরাসহ শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার শর্তে সরকার আগের সিদ্ধান্ত বদলে সব আসনে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিলেও গতকাল রাজধানীতে কোনো বাসেই স্বাস্থ্যবিধি মানার নজির মেলেনি। গতকাল দুপুরের পর সরেজমিন ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ে, কুড়িল বিশ্বরোড, রামপুরা ও পল্টনে বাসগুলোয় মাস্ক পরতে দেখা যায়নি কোনো চালক, হেলপারকে। অধিকাংশ যাত্রীর মুখেই ছিল না মাস্ক। কিছু হেলপারের মুখে মাস্ক থাকলেও নামানো ছিল থুতনিতে। কোনো বাসের হেলপারের হাতে দেখা যায়নি স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক। কিছু চালককে বাসের মধ্যে ধূমপান করতে দেখা গেছে। তবে মাস্ক পরতে দেখা গেছে বাণিজ্য মেলা ও গাউসিয়া অভিমুখী বিআরটিসির দ্বিতল বাসের কিছু চালককে। যদিও এসব বাসে অর্ধেকের বেশি যাত্রীর মুখেই মাস্ক ছিল না। গতকাল অবশ্য বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করতে খুব একটা দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে বিভিন্ন বাসের যাত্রীরা জানাান, রাস্তায় যেখানেই যাত্রী হাত উঁচু করেছে, সেখানেই বাস দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার রাস্তায় যাত্রী কম তাই আসন ফাঁকা।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাস গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিধিনিষেধের প্রথম দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১১ জনের নামে মামলা দিয়েছি। জরিমানা করা হয়েছে। বিভিন্ন পরিবহনের বাস থামিয়ে ৫০-৬০ জনকে নিজের টেবিলে ডেকেছি। অনেককে সতর্ক করেছি। মুচলেকা রেখেছি। শুক্রবার অভিযান নেই। শনিবার (আজ) থেকে আবার অভিযান চালানো হবে।’ তিনি বলেন, ‘নিজের জন্য, পরিবারের জন্য সবাইকে সতর্ক হতে হবে। কিন্তু গণপরিবহনের যাত্রীদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা অনেক কম। কেউ থুতনিতে মাস্ক নামিয়ে রাখছেন, কেউ আবার পকেটে রাখছেন। কারও কাছে মাস্ক ছিলই না। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। প্রয়োজনে অভিযান বাড়ানো হবে।’

এদিকে গতকাল বেলা ৩টার দিকে যাত্রীর জন্য প্রগতি সরণীর নতুনবাজারে এসে দাঁড়ায় ঢাকা মেট্রো-ব ১৩-০১৪১ নম্বরের প্রচেষ্টা পরিবহন, ১৩-০৮১১ নম্বরের ভিক্টর ক্লাসিক, ১১-৫৭৩২ নম্বরের বিআরটিসি, ১৩-১৭৩২ নম্বরের অছিম, ১২-০৬৫৮ নম্বরের আকাশ পরিবহনসহ আরও ৮-১০টি বাস। কোনো বাসেই চালক বা হেলপারের মুখে মাস্ক ছিল না। প্রতি বাসেই অর্ধেকের বেশি যাত্রী ছিল মাস্কহীন। আকাশ পরিবহনের একটি বাসের হেলপার নাসির বলেন, ‘মাস্ক পরে যাত্রীদের ডাকাডাকি করা যায় না। যাত্রীরা শোনে না। ডাকাডাকি করলে মুখে মাস্ক থাকেও না। এজন্য খুলে পকেটে রাখি।’ তুরাগ পরিবহনের চালক হুমায়ুনের বক্তব্য- ‘বাসের মধ্যে বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায় না। কষ্ট হয়। এ ছাড়া আমার টিকা দেওয়া আছে।’ বাড্ডায় আট বছরের নাতিকে নিয়ে অনাবিল পরিবহন থেকে নামেন পারভীন আক্তার। শিশু সিয়ামের মুখে মাস্ক থাকলেও ছিল না তাঁর। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবারে! মাস্ক পরলে দম বন্ধ হয়ে আসে। বয়স হয়ে গেছে, আল্লাহ নিয়ে গেলে যাবে।’ পল্টনে কথা হয় ইবরাহিম নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি মাস্ক পরছি। অথচ উত্তরা থেকে দেড় ঘণ্টা পাশের সিটে বসে যিনি এসেছেন তার মাস্ক ছিল না। বাসের মধ্যে অনেককেই কাশি দিতে দেখেছি। এ বিধিনিষেধে কী লাভ হচ্ছে?’

এদিকে টিকা নিলেও হতে পারে করোনা। আর সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে আক্রান্ত হতে পারে অন্যরা। এজন্য টিকা নিলেও সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে- ১৩ জানুয়ারি থেকে অফিস-আদালত, দোকান, শপিং মল, বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে মাস্ক না পরলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। নির্দেশনায় গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা বলা হলেও পরে বাসমালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার শর্তে সব আসনে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বাসগুলো শতভাগ আসনে যাত্রী পরিবহন করলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই।

সর্বশেষ খবর