শনিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মাটির নিচে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার

শিমুল মাহমুদ, গাইবান্ধা থেকে ফিরে

মাটির নিচে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার

দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে সবুজ ঘাসের নিচে ছোট ছোট গর্ত খুঁড়ে রাখা আছে। ভূমিস্তরের সমান্তরাল ঘাসের চাদর আসলে কতগুলো গুচ্ছ ভবনের ছাদ। খুব কাছে না গেলে বোঝার উপায় নেই যে মাটির নিচে সুদৃশ্য ভবন বানিয়ে সেখানে চলছে অফিস, ট্রেনিং সেন্টার ও থাকা, খাওয়া, রান্না-বান্নার কাজ। ভূগর্ভস্থ এই নান্দনিক স্থাপনা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার হিসেবে পরিচিত। গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে বালাসী ঘাটে যাওয়ার পথে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে অবস্থিত ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার মূলত একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবন-যাপনের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ফ্রেন্ডশিপ নামের এই সংস্থাটি যাত্রা শুরু করে। তাদের নির্মিত ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা হয়।

মাটির নিচে অবস্থিত এই ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার তার নান্দনিক নির্মাণশৈলীর জন্য ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে। এর ব্যতিক্রমী নির্মাণশৈলী ২০১৬ সালে মুসলিম স্থাপত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার লাভ করেছে। মহাস্থানগড় বৌদ্ধ বিহারের অনুপ্রেরণায় নির্মিত ভবনের স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। ভবনের ছাদের অবস্থান ভূমি সমতলে, ছাদের ওপর শোভাবর্ধন করে আছে চোখ জুড়ানো সবুজ ঘাস। দূর থেকে এটাকে মনে হতে পারে ঘাস বিছানো মাঠ। গাইবান্ধা-বালাসী সড়কসংলগ্ন স্থানে ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর নির্মিত ব্যতিক্রমী এই স্থাপনাটিতে বিভিন্ন দাফতরিক কাজ ছাড়াও রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খেলাধুলা, লাইব্রেরি এবং থাকা-খাওয়ার আয়োজন। প্রায় ৮ বিঘা জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা এই ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটিতে আরও আছে ইন্টারনেট সুবিধা, নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, বিষমুক্ত সবজি চাষের জমি এবং ঔষধি গাছের বাগান। ভিতরে আছে অ্যাডমিন রুম, ট্রেনিং রুম, নামাজের ঘর, ইনডোর গেমস সুবিধা, টি শপ, ডাইনিং রুম, কিচেন, উইমেন ডরমেটারি, অফিসার্স কোয়ার্টার, ফ্যামিলি ইউনিট, স্টাফ কোয়ার্টার, পুরুষদের ডরমেটারি, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পার্কিং সুবিধা, হেলিপ্যাড, লন্ড্রি সার্ভিস। তুমুল বৃষ্টিতেও এই ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পানি জমে না। এর ভিতরে রয়েছে অনেকগুলো খুদে জলাশয়। আছে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার সম্পর্কে তরুণ স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি নির্মাণে বাজেট ছিল কম। খরচের চিন্তা আর চাপের কারণে চমৎকার এই সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। ভবনের জমি খুবই নিচু ছিল। পানি আটকাতে চারদিকে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ভবনের ছাদের লেভেল রাস্তার প্রায় সমতলে। আমার লক্ষ্য ছিল অল্প খরচে সবার জন্য ভিন্নধর্মী কিছু একটা করা। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। নির্মাণকাজে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে স্থাপনাটি একটি মৌলিক কাজ। আলোছায়ার খেলা রয়েছে সেখানে। এই অনন্য স্থাপনা দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে সেখানে। তবে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। তবে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে গেলে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের ভিতরে প্রবেশ করা যায়। আমাদেরও আগে থেকেই অনুমতি নেওয়া ছিল। সংস্থাটির অফিস থেকে এক তরুণকে আমাদের গাইড হিসেবে দেওয়া হয়। তিনি সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখান। সবুজ ঘাসে ঢাকা ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের কক্ষগুলো প্রাকৃতিকভাবে বেশ ঠান্ডা থাকে। কক্ষগুলোতে প্রাকৃতিক আলোর প্রবেশের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। সীমিত পরিসরের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ আয়োজনের জন্য স্থাপনাটি ভাড়া দেওয়া হয়। এ ছাড়া দূর থেকে আসা প্রশিক্ষণার্থীরাও সেখানে রাত্রিবাস করতে পারেন।

 

সর্বশেষ খবর