সোমবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মা-মেয়েকে নির্যাতনকারী তুফান জামিনে মুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

মা-মেয়েকে নির্যাতনকারী তুফান জামিনে মুক্ত

তুফান সরকার

বগুড়ায় ভালো কলেজে ভর্তির আশ্বাস দিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং পরে বিচারের নামে ধর্ষিতা ও তার মাকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার আলোচিত মামলার আসামি তুফান সরকার জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। ১০ জানুয়ারি বিকালে তুফান বগুড়া জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসেন। তুফান সরকার মুক্ত হওয়ার বিষয়টি মিডিয়াকে  জানানো হয়নি। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার মনির আহম্মেদ। মামলাসূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুরের প্রভাবশালী বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই একই এলাকার এক ছাত্রীকে ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে ওই ছাত্রীকে তিনি ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে কয়েক দিন পর ২৮ জুলাই তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন মার্জিয়া হাসান রুমকি মীমাংসার নামে ওই ছাত্রী ও তার মাকে অপহরণ করে নিয়ে যান। সেখানে নির্যাতনের পর মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে ছেড়ে দিলে স্থানীয় লোকজন অসুস্থ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি দেন। এর পরদিন ছাত্রীর মা বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় ধর্ষণের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলায় তুফান সরকারসহ তার ১০ সঙ্গীকে আসামি করা হয়। বগুড়া সদর থানা পুলিশ বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা, শাশুড়ি রুমি খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ নয়জনকে গ্রেফতার করে। পরে অভিযুক্তরা জামিন পান। এসব ঘটনায় তুফান সরকারকে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ধর্ষণের আলামত সংগ্রহে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২০১৭ সালের ২ আগস্ট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।

তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর তুফান সরকারসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মাসহ মেয়েকে অপহরণ করে নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসানের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় হওয়া মামলায় তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা, নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া, তাদের মা রুমিসহ ১৩ সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

এদিকে জানা গেছে, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে আটটি মামলা চলমান ছিল। এর মধ্যে ছাত্রী ধর্ষণ এবং ছাত্রীর মায়ের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়ার মামলার বাদীপক্ষ আদালতে পুলিশের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ মামলা দায়ের করার অভিযোগ এনে এফিডেফিট জমা দেয়। এ কারণে অনেক আগেই আলোচিত মামলাটিতে তুফান সরকারের জামিন হয়ে যায়। ভিন্ন মামলা থাকায় কারাগার থেকে বের হতে পারেননি তুফান। সর্বশেষ মানি লন্ডারিং আইনে করা একটি মামলার শুনানি শেষে হাই কোর্ট থেকে ৫ জানুয়ারি তুফান সরকারের জামিন হয়। এরপর এ-সংক্রান্ত নথিপত্র ১০ জানুয়ারি বগুড়া কারাগারে এসে পৌঁছায়। ওই দিনই মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হন তুফান সরকার। এর আগে ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই বগুড়া সদর থানায় করা মামলায় আসামি হিসেবে কারাগারে যান তিনি।

বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার মনির আহম্মেদ জানান, ১০ জানুয়ারি নথিপত্র পাওয়া গেলে তুফান সরকার জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন।

 

সর্বশেষ খবর