বুধবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিনিয়োগে আরও সুবিধা চায় জাপান

♦ অনুমোদন ছাড়াই পাঠাতে চায় রয়্যালটি রেমিট্যান্স ♦ চলতি হিসাবে কেনাকাটা সহজীকরণের সুপারিশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বিদেশি বা যৌথ বিনিয়োগকারী কোনো কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করার পর মূল কোম্পানির নামে প্রতি বছর অনুমোদন ছাড়াই সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ রয়্যালটি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে। এর বেশি পাঠাতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর অনুমোদন নিতে হয়। এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী জাপানি কোম্পানিগুলো চাইছে, অনুমোদন ছাড়াই ৬ শতাংশের ওপরে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ নিতে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিডা কোনো কর্তৃপক্ষই এটি উন্মুক্তকরণের পক্ষে নয়। তাদের আশঙ্কা জাপানের জন্য এ সুযোগ অবারিত করলে বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার পাচারের সুযোগ নিতে পারে অন্য বিদেশি কোম্পানি।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আরও বেশি জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে ২০২০ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আয়োজনে জুম প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশ-জাপান যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাপানি বিনিয়োগকারীরা কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। বাংলাদেশ-জাপান সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপে গৃহীত এসব সুপারিশের একটি হচ্ছে ৬ শতাংশের ওপরে রয়্যালটি রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ দেওয়া। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থাগুলোর অগ্রগতি জানতে সম্প্রতি একটি সভাও হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিন-কে বলেন, জাপান ভালো বিনিয়োগকারী। তারা হয়তো অর্থ পাচার করবে না। কিন্তু অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশ থেকে রয়্যালটি রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ বাড়ালে অর্থ পাচারের সুযোগ নিতে পারে অন্য কেউ। এ কারণে আমরা ৬ শতাংশ সীমা বেঁধে গাইডলাইন করে দিয়েছি। সেই গাইডলাইন অনুসরণে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। এর আগে ১ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত রয়্যালটি ফি নেওয়া যেত।

রয়্যালটি রেমিট্যান্স কী : বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রয়্যালটি রেমিট্যান্স এমন এক ধরনের ফি যা কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান তার মূল কোম্পানির নামে ফ্রাঞ্চাইজি ফি হিসেবে পরিশোধ করে। ধরা যাক, বাংলাদেশে কেএফসি বা হোন্ডার কারখানা থেকে যে বিক্রি হয়, প্রতি বছর তার একটি অংশ বাংলাদেশ থেকে মূল প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয় তার পেটেন্ট, সুনাম, কর্ম-কৌশল ব্যবহারের জন্য। বিনিয়োগকারী কোম্পানি এটিকে রয়্যালটি রেমিট্যান্স বা ফি হিসেবে এবং প্রকল্পে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান এটিকে টেকনিক্যাল ফি হিসেবে পাঠাতে পারে।

নীতিমালায় কী আছে : বাংলাদেশ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নলেজ ও টেকনিক্যাল নো-হাউ ফি, টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফি এবং ফ্রাঞ্চাইজি ফি বিদেশ পাঠানোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। বিডার গাইডলাইন অনুযায়ী গত বছরের এপ্রিলে এর ওপর একটি নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে অনুযায়ী বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান তার আগের বছরের মোট বিক্রির (ভ্যাট ব্যতীত) ৬ শতাংশ অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে মূল প্রতিষ্ঠানের নামে পাঠাতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো প্রকল্পে বিদেশি কোম্পানি অংশ নিলে সেক্ষেত্রে আমদানি করা যন্ত্রপাতির সিঅ্যান্ডএফ মূল্যের ৬ শতাংশ বিদেশে মূল প্রতিষ্ঠানের নামে অনুমোদন ছাড়াই পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। জাপান চায় এই সুযোগ ৬ শতাংশ থেকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া হোক।

চলতি হিসাবে আরও বেশি কেনাকাটার সুযোগ : রয়্যালটি রেমিট্যান্সের পাশাপাশি বাংলাদেশি প্রকল্পে নিয়োজিত জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চলতি হিসাবের বিপরীতে আরও বেশি কেনাকাটার সুযোগ চেয়েছে। এই সুপারিশটি বাস্তবায়নেও বাংলাদেশকে তাগিদ দিচ্ছে জাপান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী রফিকুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে চলতি হিসাবের বিপরীতে অনুমোদন ছাড়াই ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত আমদানির সুযোগ রয়েছে। তবে কোনো বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যদি কোনো পণ্য আমদানি করতে বা সেবার বিপরীতে অগ্রিম বিল পরিশোধ করতে চায় তবে সেক্ষেত্রে অনুমোদন লাগবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আগে খুব বেশি স্ফীত ছিল না। এ কারণে কিছু কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ ছিল। তবে বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে। এখন মুনাফা, লভ্যাংশ ও মূলধন নিয়ে যেতে পারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া বর্তমান নিয়মে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই লভ্যাংশের পুরোটা নেওয়ার সুযোগ আছে। আগে এক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ ছিল। শুধু অর্থ প্রত্যাবাসনের ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক-কে অবহিত করতে হয়। এ ছাড়া অগ্রিম ফি পরিশোধের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ব্যবস্থায় অনসৃত নির্দেশনা পরিপালন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর