বুধবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পণ্যমূল্যের লাগাম টানার পরামর্শ আইএমএফের

বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের মূল্য

মানিক মুনতাসির

করোনা মহামারির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েই চলেছে। অথচ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে মহামারির ধাক্কায়। এদিকে দ্রব্যমূল্যের চাপে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে। শুধু দেশে নয়, বিশ্ববাজারেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশুগুলোয়ও এর চাপ বাড়ছে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যও দ্রুত ওঠানামা করছে। যার প্রভাব পড়ছে উৎপাদনের ওপর। এজন্য দেশের পণ্যমূল্যের লাগাম টানার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সম্প্রতি সংস্থাটির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলপ্রধানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। সে সময় তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করে। আলোচনায় সরকারের আয়-ব্যয়, বাজেট বাস্তবায়ন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের রাজস্ব আয় নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেখানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও কড়া পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে উৎপাদন, বণ্টন, পরিবহন ও সরবরাহ পর্যায়ে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে আইএমএফ। অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) উদ্ধৃতি দিয়ে সংস্থাটি বলছে, খাদ্যপণ্যের দাম এক বছরে বেড়েছে ৩১ শতাংশ, এক বছরে যে হারে দাম বেড়েছে গত এক দশকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম এতটা বাড়েনি। পণ্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে; যা চরম ভোগান্তিতে ফেলবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। এদিকে মোটা চালের দামও প্রতি কেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভোজ্য তেলের দাম উঠেছে লিটারপ্রতি ১৫০ টাকা । খুচরা মূল্য ১৬০ টাকা। চিনির কেজিও ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই। শুধু তাই নয়, শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমেও বাজারে সবজির দাম চড়া। মাছ, মাংসের দাম তো সারা বছরই ঊর্ধ্বমুখী। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে পরিবহন খরচও। যার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। আইএমএফ তাদের পর্যবেক্ষণে বলছে, করোনা-পরবর্তী এক নতুন অর্থনীতির মুখ দেখবে বিশ্ববাসী। এতে অর্থনীতিতে নতুন ধরনের চাহিদার সৃষ্টি হবে। এজন্য নতুন নতুন বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। যা কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এসব বিষয় সামনে রেখে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এক ধরনের কঠিন চ্যালেঞ্জ পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নতুন নতুন চাহিদার সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলোও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলেছে সংস্থাটি। এদিকে নিত্যপণ্যের দাম শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপীই বাড়ছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এর প্রভাব অনেক বেশি। যার ফলে এখানে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যমূল্য নিয়ে কাজ করা ট্রেডিংডটকমের তথ্যমতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভুটানে ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি খাদ্য মূল্যস্ফীতি শ্রীলঙ্কায়। নভেম্বরে সেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ২২ শতাংশ; যা এক মাস আগে ছিল ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর পাকিস্তানের অবস্থান। দেশটিতে নভেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অবশ্য এক মাস আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতির চাপ সামান্য কমেছে। আলোচ্য সময়ে ভুটানে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এক মাস আগেও দেশটিতে মূল্যস্ফীতির চাপ ছিল ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অবাক করা বিষয় হলো, দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে আফগনিস্তানে মূল্যস্ফীতির চাপ সবচেয়ে কম। দেশটিতে গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল মাইনাস দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এরপর সবচেয়ে কম মূল্যস্ফীতির চাপ ভারতে। দেশটিতে নভেম্বর-২০২১-এ মূল্যস্ফীতি ছিল ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অবশ্য এক মাস আগে অক্টোবরে চাপ ছিল দশমিক ৮৫ শতাংশ। মালদ্বীপেও মূল্যস্ফীতির চাপ কম। সেটা নভেম্বরে এসে ৩ দশমিক ৯ থেকে কমে ১ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে দেশে সর্বশেষ গত বছর নভেম্বরে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশে হয়েছে। এটি অক্টোবরেও ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল। এদিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে, যা অক্টোবরে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা অক্টোবরে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ ছিল। অর্থ বিভাগ বলছে, করোনা মহামারির প্রভাব মোকাবিলা ও মানুষের ভোগান্তি কমাতে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। অবশ্য এ ব্যাপারে সরকারের কোনো সংস্থাকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর