বুধবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মেডিকেল কলেজের বিদেশি ৫৮ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত

♦ নম্বর সমতাকরণ সনদ পেতে বিলম্ব, নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ ♦ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাইকমিশনে চিঠি

আকতারুজ্জামান

দেশের ১১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া বিদেশি ৫৮ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশে এসে প্রায় পাঁচ মাস ধরে লেখাপড়া করছেন। সম্প্রতি ‘নম্বর সমতাকরণ সনদ’ না থাকার অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই ছাত্রছাত্রীদের নিজ দেশে ফেরত যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এমন আদেশ পেয়ে বিদেশি ৫৮ শিক্ষার্থী চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। উ™ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধান চেয়ে এ দেশে পড়াশোনার সুযোগ দাবিতে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে আবেদন করেছেন কয়েকজন ভারতীয় শিক্ষার্থী। জানা গেছে, বিদেশি এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫২ জন ভারত থেকে এবং ৬ জন নেপাল থেকে এসে এ দেশে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তারা সবাই নিজ দেশে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই বাংলাদেশে আবেদন করেন। এরপর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মার্কস মেডিকেল কলেজে পড়ছেন ৩ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজে ৪ জন, মুন্নু মেডিকেল কলেজে ৬ জন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজে ৯ জন, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজে ৬ জন, প্রাইম মেডিকেল কলেজে ২ জন, সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজে ৫ জন, মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজে ৬ জন, সিটি মেডিকেল কলেজে ৩ জন, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে ৪ জন ও সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজে ১০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনা সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগত কারণে নম্বর সমতাকরণ সনদ পেতে দেরি হয়েছে এই বিদেশি শিক্ষার্থীদের। মেডিকেলের ভর্তি কার্যক্রম তো এখনো চলছে। বিশেষ বিবেচনায় তাদের সনদ দিয়ে সমস্যা সমাধানের দাবি জানাই। বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনার সুযোগ না পেলে তাদের দুর্দশার শেষ থাকবে না। কারণ তারা সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভিসা নিয়েই এ দেশে এসেছেন। এই বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে না পারলে কূটনৈতিক সম্পর্কেও অবনতি ঘটতে পারে। ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, এই শিক্ষার্থীদের অনেকে ঋণ নিয়ে এ দেশে পড়তে এসেছেন। করোনার কারণে তাদের সনদ পেতে দেরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ না দিয়ে ফিরিয়ে দিলে সেটি হবে অমানবিক ও অযৌক্তিক। তথ্যমতে, ১০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বরাবর এক চিঠি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়, ৫৮ জন বিদেশি ছাত্রছাত্রী নম্বর সমতাকরণ সনদ ছাড়াই ভর্তি হয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে ১৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৫৮ বিদেশি শিক্ষার্থীকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১১ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। তাই তাদের নম্বর সমতাকরণ সনদ ইস্যুর সুযোগ নেই। এসব শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ দেশে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে। একই সঙ্গে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় ১১ মেডিকেল কলেজকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নোটিসের জবাবও দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলো। জবাবে কলেজগুলো এই বিদেশি শিক্ষার্থীদের নম্বর সমতাকরণ সনদ ইস্যুর অনুরোধ করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান জানান, বাংলাদেশ দূতাবাস প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো করোনার কারণে যথাসময়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরে পৌঁছে দিতে পারেনি। ফলে নম্বর সমতাকরণ সার্টিফিকেট যথাসময়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এ ব্যর্থতার দায় ছাত্রছাত্রীরা কেন নেবে? এই ৫৮ জন ছাত্রছাত্রী যখন ভারত ও নেপাল দূতাবাসে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করেছেন তখন দূতাবাস তাদের যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই করে স্টুডেন্ট ভিসা প্রদান করেছে। যদি একজন শিক্ষার্থীর ভর্তির যাবতীয় কাগজপত্র ঠিকই না থাকে সে ক্ষেত্রে তারা দীর্ঘমেয়াদী স্টুডেন্ট ভিসা পান কী করে?

২৩ জানুয়ারি ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে করা আবেদনে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ‘যথাসময়ে আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত নম্বর সমতাকরণ সনদ পাইনি। মন্ত্রণালয়ের জারি করা চিঠিতে নিজ দেশে ফেরত যেতে বলা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে চাই।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব এ বিষয়ে বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি ৫৮ শিক্ষার্থীর নম্বর সমতাকরণ সনদ না থাকার বিষয়টি জানতে পারি। এরপর স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে তাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর