শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

জলাশয়ে নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ

রেলমন্ত্রীকে মেয়র আতিকের ফোন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জলাশয়ে নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ

কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের জলাধারের জায়গা ভরাট করে নির্মাণাধীন স্থাপনা, বিলবোর্ড গতকাল ভেঙে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের জলাধারের জায়গা ভরাট করে ঘিরে নির্মাণাধীন আধাপাকা স্থাপনা, বিলবোর্ড ভেঙে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ওই জলাধারটি বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ইজারা দিয়েছিল। গতকাল কুড়িল ফ্লাইওভার ও রেললাইন সংলগ্ন জলাধার পরিদর্শনে যান ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

স্থাপনা ভাঙা শুরুর আগে তিনি রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে মোবাইলে কল দেন। পরে ফোন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালককে। ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আপনারা জলাধার পাঁচ তারকা হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দ দিচ্ছেন’ বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদারকে মুঠোফোনে এ কথা বলেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কোনো ধরনের জলাধার ভরাট করা যাবে না। সেখানে কীভাবে বরাদ্দ দিলেন? আপনি কি জানেন না এটা জলাধার? খবর নেন, দ্রুত এ বরাদ্দ বাতিল করেন।’

রেলের মহাপরিচালককে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি তাদের (বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠান) বলে দেন এখানে আমি করতে দেব না। আমি এটা ভেঙে দিচ্ছি।’ পরে তিনি বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনহীন বিশালাকার একটি সাইনবোর্ড ভাঙার নির্দেশ দেন। কুড়িল উড়ালসড়কসংলগ্ন এলাকায় বিশালাকার একটি জলাধার রয়েছে। জলাধারের এক পাশে রেললাইন ও কুড়িল উড়ালসড়কের খিলক্ষেত-প্রগতি সরণি অংশ, অন্য পাশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। এ জলাধারে খিলক্ষেত, নিকুঞ্জসহ আশপাশ এলাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হয়। জায়গাটি বাংলাদেশ রেলওয়ের। গত ডিসেম্বরে নিজেদের অব্যবহৃত ১ দশমিক ৮৪ একর রেলভূমি মিলেনিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দিয়েছে। মিলেনিয়াম সেখানে একটি পাঁচ তারকা হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য জলাশয়টি ভরাটের কাজ করছে। সরেজমিন দেখা যায়, জলাধার ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। নিজেদের একটি অস্থায়ী কার্যালয়ও নির্মাণ করেছেন মিলেনিয়াম কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের নাম লিখে একটি বিশালাকার সাইনবোর্ডও বসিয়েছিল ওই প্রতিষ্ঠান। তবে তা সিটি করপোরেশনের অনুমোদনহীন। মেয়র সাইনবোর্ডটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। এর আগে মেয়র আতিকুল ইসলাম রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। তিনি মন্ত্রীকে বলেন, কুড়িল বিশ্বরোড উড়ালসড়কের নিচে বিশালাকারের জলাধার আছে। এখানে খিলক্ষেত ও নিকুঞ্জের বৃষ্টির পানি নামে। খোলা জায়গায় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে। কিন্তু হঠাৎ জলাধার ভরাট করা হচ্ছে। রেলমন্ত্রী এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও মেয়র জানান। পরে সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, এ জলাধার ভরাট হলে আশপাশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট হবে। তা ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩০০ ফুট সড়কের দুই পাশে যেখানে খাল খনন করা হচ্ছে, এর পাশেই জলাধার ভরাট করে হোটেল ও শপিং মল বানানো হলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সাইনবোর্ড নিয়ে তিনি বলেন, ‘করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া এত বড় সাইনবোর্ড লাগানোর স্পর্ধা তারা কোথায় পায়? এটা আমি ভেঙে ফেলব। আর কাদের ম্যানেজ করে জলাধারের জায়গায় হোটেল নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে?’ মাঠপর্যায়ে এসে যাচাই না করে এভাবে বরাদ্দ দেওয়ার কারণেই নগর অপরিকল্পিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর