শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়ায় স্কুলছাত্র খুন, বেডরুমে গৃহবধূর লাশ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ছুরিকাঘাতে এক স্কুলছাত্র এবং খোকসায় নিজ ঘরের শয়নকক্ষ থেকে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে ছুরিকাঘাতে দশম শ্রেণির স্কুলছাত্র দিদার (১৭) নিহত হয়। অপরদিকে খোকসা উপজেলায় নিজ ঘরের শয়নকক্ষ থেকে পুলিশ পারভীন খাতুন (৪০) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে। বুধবার রাতে পৃথক এ দুটি খুনের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে পূর্ব শত্রুতার জেরে কুমারখালী উপজেলার    শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা গ্রামের হাজী হোসেন আলীর ছেলে স্কুলছাত্র দিদারকে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে ও পিটিয়ে হত্যা করে। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, এক মাস আগে দিদারের মামাতো ভাই মোস্তাফিজ চাকরি থেকে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এলে একই এলাকার মিজান ও বাবুর সঙ্গে তার গ গোল হয়। এ সময় তাদের দ্বারা হামলার শিকার হয়ে মোস্তাফিজ দীর্ঘদিন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। সে সময় মারধরের ঘটনায় বাবু ও মিজানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ঘটনার জেরে বুধবার রাতে শিলাইদহ বাজারে একটি কাঠের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় কাঠ মিস্ত্রি বাবু ও মিজানের সঙ্গে দিদারের বাগবিতন্ডা হয়। এ সময় বাটাম, ছুরি নিয়ে তার ওপর চড়াও হয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই দিদারের মৃত্যু হয়। পরে খবর পেয়ে কুমারখালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। অপরদিকে বুধবার সন্ধ্যায় খোকসা উপজেলার একতারপুর কমলাপুর রইস ম লের স্ত্রী পারভীন খাতুনের (৪০) লাশ নিজ ঘরের শয়নকক্ষ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে গৃহবধূ পরভীনের স্বামী কাজে বেরিয়ে যাওয়ার পর পরকীয়া প্রেমিক বিল্লাল হোসেন (টিউবওয়েল মিস্ত্রি) গৃহবধূর বাড়িতে আসেন। প্রথমেই দুজনের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে গৃহবধূ ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা দেন। বিল্লাল প্রেমিকা পারভীনকে শান্ত করতে বেড়ার ভাঙা অংশ দিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। এ সময় গৃহবধূর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে বাড়ির পাশের দোকানে পান কিনতে পাঠান প্রেমিক বিল্লাল। কিছু সময় পর শিশুটি বাড়ি ফিরলে বিল্লাল জানান তার মা ঘুমাচ্ছে। তাকে যেন না ডাকা হয়। একপর্যায়ে গৃহবধূর ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখে বিল্লাল দ্রুত পালিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর পারভীনের ছেলে বাড়ি ফিরে মাকে ডাকাডাকি শুরু করে। সাড়া-শব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহয়তায় ঘরের দরজা খুলে বিছানার ওপর তার মায়ের (গৃহবধূর) লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে রাতেই খোকসা থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। নিহত গৃহবধূর স্কুলপড়ুয়া ছেলে রহিম জানায়, বিল্লাল মিস্ত্রি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের বাড়িতে ছিল। প্রথমে তার মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরে বিল্লাল তার মায়ের (গৃহবধূ) ঘরে যান। তার পর শিশুটির সঙ্গে মায়ের আর দেখা হয়নি। তবে মিস্ত্রি যাওয়ার সময় তাকে জানান তার মা ঘুমাচ্ছেন। তাকে যেন ডাকা না হয়। সন্ধ্যায় সে বাড়ি ফিরে আসে। মা-কে না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঘরের দরজা খুলে সে মায়ের লাশ দেখতে পায়। এলাকাবাসী জানায়, গৃহবধূ পারভীনের গলায় দাগের চিহ্ন রয়েছে। নিহত গৃহবধূর স্বামী রইচ ম ল জানান, তার স্ত্রী পারভীনের সঙ্গে বিল্লাল মিস্ত্রির পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ বিষয়ে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানে। দুই-তিন মাস আগে তার স্ত্রী পারভীন আশা সমিতি থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ তুলে বিল্লালকে দিয়েছিলেন। এ ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে বিরোধের জের ধরে বিল্লাল তার স্ত্রীকে খুন করে ফেলে রেখে যান বলে তিনি দাবি করেন। নিহতের ভাই হাসনু জানান, পরকীয়া প্রেমের কারণে তার বোন খুন হয়েছেন। তবে এ হত্যায় বিল্লালকে সহায়তা করেছে তার বোনের ভাসুর রফিকসহ অন্যরা।

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান জানান, গৃহবধূ হত্যার ঘটনায় তার ভাই হাসনু বাদী হয়ে কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ ওই গৃহবধূর ভাসুর মামলার আসামি রফিকে গ্রেফতার করেছে। তবে পরকীয়া প্রেমিক বিল্লাল হত্যাকান্ডের পর থেকে পলাতক রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর