শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মাঘের শীতে কাঁপছে উত্তর

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কুড়িগ্রামে ৬.১ ডিগ্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাঘের শীতে কাঁপছে উত্তর

গ্রাম্য প্রবাদ বলে, ‘মাঘের শীতে বাঘে কান্দে’। বৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমের মাঘের এ প্রকোপ এবার একটু দেরিতেই এসেছে। এরইমধ্যে তীব্র শীতে হাড় কাঁপতে শুরু করেছে উত্তরাঞ্চলবাসীর। গতকাল তাপমাত্রার পারদ ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে। যা এ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং এরকম আরও দুই-তিন দিন থাকতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন।

এদিকে কনকনে শীতে ভোগান্তি বেড়েছে খেটে খাওয়া মানুষদের। শীতজনিত রোগে কষ্ট পাচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। গতকাল সকাল ৯টায় আবহাওয়া অধিদফতরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানানো হয়, সারা দেশের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং এ সময় দিনের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সারা দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের রাজারহাটসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়া পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং এর কাছাকাছি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বাড়তি অংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে মাঘের এ কনকনে ঠান্ডায় খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে চারা রোপণের কাজ করা শ্রমজীবীরা এবং রিকশা ও ভ্যানচালকরা সময়মতো কাজে বের হতে পারছেন না। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বয়স্করা। গবাদি পশুও রয়েছে কষ্টে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে গতকাল থেকে দুই-তিন দিনব্যাপী মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঝারি এ ধরনের শৈত্যপ্রবাহ আগামী দু-তিন দিন থাকতে পারে বলে জানায় কুড়িগ্রামের রাজারাহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিস। রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের সদ্য যোগদানকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, যা দেশে সর্বনিম্ন। এ বছরের শীতে এরকম নিম্নগামী তাপমাত্রা এটিই প্রথম। গত দুই সপ্তাহ ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ার কারণে জেলার আলু ও বোরো বীজতলার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানান কয়েকজন কৃষক। অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রকোপে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে আলু খেত রক্ষা করতে ঘন ঘন ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে কৃষকদের। তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে কৃষকরা বোরো বীজতলা থেকে চারা তোলাসহ বোরো রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, হিমেল হাওয়া আর মাঘের শীতে কাঁপছেন দিনাজপুরের মানুষ। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে এ জেলার মানুষ আবার পড়েছেন শৈত্যপ্রবাহের কবলে। এর সঙ্গে বেড়েছে হিমেল হাওয়ার গতিবেগ এবং আর্দ্রতা। এতে হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। দিনের শুরুতে সূর্য দেখা দিলেও বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকায় হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের তীব্রতায় সূর্যের তাপ ম্লান হয়ে যায়। বিকালের পর থেকে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে। দিনাজপুর শহরের অনেক স্থানে সন্ধ্যায় খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেককে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, যশোর, কুষ্টিয়া এবং রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে এখন মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে এবং আরও এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

শীতে জবুথবু জনজীবনে আরও বেশি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঠান্ডাজনিত নানা উপসর্গ। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর জেলায় এক মাসে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু-বৃদ্ধসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। উত্তরের জেলাগুলোতে সরকারি, বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন। আবহাওয়াবিদরা জানান, অন্যান্য বছর ডিসেম্বরের শুরু থেকে এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলেও এ বছর শীত নেমেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়ে এখন তা অনেকটা মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে দুই দিন ধরে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা এ অঞ্চলের মানুষকে কাহিল করেছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর