সোমবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

পাখির খামার পাল্টে দিয়েছে জীবন

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

পাখির খামার পাল্টে দিয়েছে জীবন

বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে পাখির খামার। বেকার যুবকরা বাণিজ্যিক খামার গড়ে জীবনযুদ্ধে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। অনেকেই শখের বসে শুরু করে এখন রীতিমতো বাণিজ্যিক খামারের মালিক হয়েছেন। চলছে কেনাবেচা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আয়।

জানা যায়, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া, চেলোপাড়া, খান্দার, কলোনি, বনানী, কালীতলা, জহুরুল নগর, ফুলবাড়ী, শেরপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাখি ও কবুতরের খামার গড়ে উঠেছে। একেকটি খামারে ২০ থেকে লাখ টাকার পাখি ও কবুতর রয়েছে। খামারগুলো এখন বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে। বাণিজ্যিকভাবে নিয়ে অনেকেই এখন নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে মাঠে নেমেছেন। জেলার অনেক বেকারই এখন স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছেন। বগুড়া শহরের ঝাউতলার আদর্শ প্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম জানান, তিনি তিনটি স্থানে পাখি ও কবুতরের খামার গড়ে তুলেছেন। তার খামারে কয়েক লাখ টাকার পাখি ও কবুতর রয়েছে। নিজ বাড়ির ছাদে, অফিসের ছাদে তিনি এই পাখি ও কবুতরের খামার গড়েছেন। খাবার দেওয়া আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ছাড়া তেমন শ্রম দিতে হয় না। খাবার খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বাদ দিয়ে পুরোটায় তার আয় হয়ে থাকে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী গ্রামের শিক্ষক আবদুল কাদের মজনুর ছেলে হুমায়ুন কবির পাখির সফল খামারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি এখন এই উপজেলার শিক্ষিত বেকার নারী-পুরুষের কাছে মডেল। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে তার মতো অন্তত দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ বাণিজ্যিক পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। স্বপ্ন দেখছেন স্বাবলম্বী হওয়ার। তবে তাদের স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। সেটি করা হলে এসব খামারে অনেকের কর্মসংস্থান হবে। পরিবারে আসবে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ব্যক্তিরাও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শৌখিন পাখির খামার গড়ে তুলেছেন। অবসর সময় কাটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছেন।

জেলার শেরপুর উপজেলার মাহফুজার রহমান সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে শহরের বাগানবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাসার ছাদেই গড়ে তুলেছেন শৌখিন পাখির খামার। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই সেটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়েছে। তার খামারেও রয়েছে অন্তত ১৫ প্রজাতির বিভিন্ন বিদেশি পাখি। প্রতি মাসে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার পাখি বিক্রি করে থাকেন। তিনিও মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন খামার থেকে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মাকোরকোলা গ্রামের মাহবুব হোসেন, পৌর শহরের স্যানালপাড়ার স্কুলছাত্র লাবিব হাসান, বিকাল বাজারের কলেজছাত্র আবু রায়হান রনি, খন্দকারটোলার ফাহিমসহ আরও অনেকেই পাখির খামার গড়ে ইতোমধ্যে সফলতা পেয়েছেন। মিলেছে অর্থনৈতিক মুক্তি। তাদের পরিবারে এনে দিয়েছে সচ্ছলতা। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় দেড় শর মতো শৌখিন পাখির বাণিজ্যিক খামার রয়েছে। এ ছাড়া আরও দুই শতাধিক বাসাবাড়িতে শৌখিনভাবে পাখি পালন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই খাতে সহস্রাধিক পরিবারের লোকজনের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এসব খামার  গড়ে সফল হওয়ায় বেকার তরুণ-তরুণী এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে করোনাকালীন স্কুল-কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এই সময়ে স্কুল-কলেজের অনেক শিক্ষার্থী শৌখিন পাখি পালন করে বেশ লাভবান হয়েছেন। তাই দিন দিন এই উপজেলায় বাণিজ্যিক খামার বাড়ছে বলে সূত্রটি জানায়।

 

সর্বশেষ খবর