বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদেশি বিনিয়োগ ধরতে কৌশল বদলাল সরকার

মানিক মুনতাসির

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে তফসিলি ব্যাংকগুলোর সব শাখায় হিসাব খুলতে পারবেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ২০১৯ সালের মে’তে এমন সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে যেখানে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয় এমন শাখায় (এডি) বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খুলতে পারতেন। অবশ্য গত প্রায় দুই বছরে এতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি বিনিয়োগচিত্রে। অন্যদিকে আবার এখন থেকে বাংলাদেশিরাও বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে দেশের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা হয়ে ফিরে আসবে বিনিয়োগের মুনাফা- এমনটাই মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট ও কর্র্মসংস্থান বাড়াতে এমন কৌশল বদলেছে সরকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। যে কোনো দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে এলে অবশ্য সে দেশের নাগরিকদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও তা-ই করছে। দেশ থেকে অর্থ পাচার ঠেকাতেও এ কৌশল বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে সরকার।

এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ও বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সামিট-২০২১ আয়োজন করা হয় রাজধানী ঢাকায়। এতে ৫৪টি দেশ থেকে বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকরা অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি সত্ত্বেও গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। এতে দেশের পুঁজিবাজারে ওষুধ, ব্যাংক এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানিগুলোয় সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এ তিন খাতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। দেশের পুঁজিবাজারের মোট ১৯টি খাতের কোম্পানিতে বিদেশিদের কৌশলগত ও পোর্টফোলিও বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে গত বছর নভেম্বর শেষে বিদেশিদের কাছে থাকা ওষুধ খাতের শেয়ারের বাজার মূলধন ছিল সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, যা খাতটির মোট বাজার মূলধনের ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ সময় খাতটির মোট বাজার মূলধন ছিল ৭১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। বিদেশি বিনিয়োগের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। গত বছরের নভেম্বর শেষে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা ব্যাংকের শেয়ারের বাজার মূলধন ছিল ৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা, যা এ খাতের মোট বাজার মূলধনের ৬ শতাংশ। গত বছর নভেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট বাজার মূলধন ছিল ৭২ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। এতে কর্মসংস্থানের খরাও কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। যদিও বেসরকারি সংস্থাগুলো ভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেছে, করোনা মহামারির ধাক্কায় যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। আর নতুন কর্মসংস্থানের পথও মসৃণ নয়। দেশে কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। এজন্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বাংলাদেশিদের বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশি ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগ ভালো উদ্যোগ। এর ফলে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্যরাও আছে। সব দেশই তাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেটটা আস্তে আস্তে অনুমোদন করে। জনগণের বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এটা করা হয়, আমরাও সে পথে যাচ্ছি। আমরা মনে করি আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ হলে সেখান থেকে আয়ও আসবে। আমাদের জনগণই সেখানে গিয়ে চাকরি করবে। আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমরা যদি বন্ধ করে রাখি, অন্যদের অ্যালাউ না করি তাহলে আমরা পিছিয়ে থাকব। আমি মনে করি এটা আমাদের ভালো উদ্যোগ। এটা নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি। বিষয়টি হলো আমাদের দেশে লোকজনের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব অনেক বেশি, আমাদের সক্ষমতাও অনেক বেশি।’

সর্বশেষ খবর