শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ধু-ধু প্রান্তে ফুলের রাজ্য

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

ধু-ধু প্রান্তে ফুলের রাজ্য

ফুলের ঘ্রাণে ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতোই একটি গ্রাম সাবদী। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নে এর অবস্থান। ছোট্ট এই গ্রামটি এখন ‘ফুলের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। এ রাজ্যে রয়েছেন ৪ শতাধিক ফুল চাষি। এ গ্রামের আশপাশের সব জমি ও বাড়ির আঙিনায় হরেক রকমের ফুলের বাগান।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী, ফেলারদী, আখতলা, মুখ কলদী, দীঘলদী, মাধবপাশা, আরজাদি, শেলসারদী ও বন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীবাড়ী, চিনারদী, মোল্লাবাড়ী, কলাবাগ, নবীগঞ্জ, তিনগাঁও এলাকায় বিভিন্ন জমিতে বিভিন্ন জাতের ও রঙের গাঁদা, চেরি, চন্দ্রমল্লিকা, জবা, সূর্যমুখী, গ্যালেরিয়া, ডালিয়া, স্টার, মাম, কাঠমালতি, বেলি, ঝাড়বাড়া ও জিপসিসহ অন্তত ৪০ প্রকারের দেশি-বিদেশি হরেক রকমের ফুল চাষ হচ্ছে। তাজা ফুলের সুবাস নিতে ও মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত দর্শনার্থী ভিড় করছেন এখানে। মাঠের পর মাঠজুড়ে ফুলের খেত। এ গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে।। ফুলই এখানে ফসল। মূলত ফুলের চাষাবাদ করে এ এলাকার লোকজন তাদের ভাগ্যের চাকার পরিবর্তন করেছেন। তারা ফুল উৎপাদন, ফুলের মালা তৈরি ও ফুল বিক্রিতে সরাসরি জড়িত আছেন। প্রতিদিন এ এলাকা থেকে লাখ লাখ টাকার ফুল রাজধানীর শাহবাগ, চট্টগ্রাম ও মুন্সীগঞ্জের ফুলের আড়তে যায়।

প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, ফুল চাষ এখানকার মানুষের দিন বদলে দিয়েছে। যাদের নুন আনতে পানতা ফুরাত, তারা এখন সচ্ছল। এই গ্রামের দেখাদেখি এখন আশপাশের অনেক গ্রামেই ফুল চাষ হচ্ছে। ফুল চাষি মোতালেব বলেন, গত এক দশক ধরে সাবদী ছাড়াও দিঘলদী, সেলশারদী, মাধবপাশা, আইছতলাসহ সোনারগাঁ উপজেলার সম্ভুপুরা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে।

এই অঞ্চলের হতদরিদ্র কৃষকরা ফুল চাষে সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন। এখানকার ফুল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

কৃষকরা জানান, এ বছর ফুলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে তবে তাতেও তারা খুশি। এবার ভালো দামের প্রত্যাশা তাদের।

তারা জানান, এবার ফুলের সব বাগান হয়তো ১৪ ফেব্রুয়ারির (বাংলা নববর্র্ষ) বাজার ধরতে পারবে না কারণ অনেক ফুল এখনো পরিপক্ব হয়নি। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী টার্গেট রয়েছে তাদের। চাষাবাদ আরেকটু আগে শুরু করতে পারলে এবার পুরোপুরি টার্গেট সম্পন্ন হতো ব্যবসায়ীদের।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৮০ সালে গাঁদা ফুল, কাঠমালতি ফুল দিয়ে এ উপজেলার সাবদী এলাকায় ফুলের চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে ব্যবসা প্রসারিত হয়ে এখন ফুল চাষ করে স্থানীয় লোকজন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।

বন্দর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তোফায়েল হাসান জানান, এবার কৃষকদের কথা অনুযায়ী চাষাবাদ গত বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে। তবে ফুলের বাজারে তো দাম ওঠানামা করে। আর ফেব্রুয়ারিতে ফুলের ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসেবে এবার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। ফুল চাষিদের হিসাব অনুযায়ী এবার তাদের ৪০ লাখ টাকার ওপরে লাভ হতে পারে। তবে আশা করছি এবার ফুলের ব্যবসা ভালো হবে।

সর্বশেষ খবর