শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে নতুন উদ্যোগ

টিআরের টাকায় হবে বজ্রনিরোধক ছাউনি

জনগুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে অগ্রাধিকার দিতে ডিসিদের নির্দেশ

উবায়দুল্লাহ বাদল

সোলার প্যানেল, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার পর এবার টেস্ট রিলিফের (টিআর) টাকায় হবে ‘লাইটনিং অ্যারেস্টার’ বা বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী স্থাপন করা হবে বজ্রনিরোধক দণ্ড, বজ্রনিরোধক যন্ত্র বা বজ্রপাত নিরোধক ছাউনি। বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে তালগাছ লাগানোর পর এবার নতুন এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এজন্য বিষয়টি বিদ্যমান গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর-খাদ্যশস্য/নগদ টাকা) কর্মসূচি নির্দেশিকা-২০২১-এ অন্তর্ভুক্ত করে আদেশ জারি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে আদেশের কপি সব জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের (পিআইও) কাছে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, গত ১০ বছরে বজ্রপাতে দেশে কমবেশি আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরও বজ্রপাতে মারা গেছেন আড়াই শতাধিক মানুষ। সর্বশেষ ৪ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি বরযাত্রী দলের ওপর বজ্রপাত হলে ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরা সবাই বৃষ্টির কারণে একটি ঘরের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী বজ্রপাতে ২০১১ সালে মারা গেছেন ১৭৯, ২০১২ সালে ২০১, ২০১৩ সালে ১৮৫, ২০১৪ সালে ১৭০, ২০১৫ সালে ১৬০, ২০১৬ সালে ২০৫, ২০১৭ সালে ৩০১, ২০১৮ সালে ৩৫৯, ২০১৯ সালে ১৯৮ ও ২০২০ সালে ২৪৭ জন। যদিও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, বজ্রপাতে প্রতি বছর গড়ে ২ শতাধিক মানুষ মারা যান। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫৯ জন মারা গেছেন। এর ৭৫ শতাংশই কৃষক। গবেষকরা বলছেন, নাসার তথ্যানুযায়ী বজ্রপাতের অন্যতম হটস্পট বাংলাদেশ।

বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে নতুন এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আতিকুল হক। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বজ্রপাতে মৃত্যুর হার দিন দিনই বাড়ছে। গত বছরই মারা গেছেন ২৬০ জনের বেশি। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুহার কমাতে টিআরের টাকায় লাইটনিং অ্যারেস্টার-সংবলিত বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড ও ছাউনি নির্মাণ করা হবে। এজন্য টিআর-সংক্রান্ত বিদ্যমান নির্দেশিকা সংশোধন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এ-সংক্রান্ত চিঠির কপি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমিটি।’ ৭ ফেব্রুয়ারির ওই আদেশে বলা হয়- সাম্প্রতিক কালে সারা দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শুধু ২০২০ সালেই বজ্রপাতে দেশে ২৪৭ জন মারা গেছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সরকার বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘লাইটনিং অ্যারেস্টার’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় বজ্রনিরোধক দণ্ড, বজ্রনিরোধক যন্ত্র ও বজ্রপাত নিরোধক ছাউনি স্থাপন করা হবে। এর আগে টিআর খাতের টাকায় সিসি ক্যামেরা কেনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে পরিপত্র জারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছিল- টিআর কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত অর্থে গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ বিভিন্ন শিক্ষা, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পাশাপাশি সব নির্বাচনী এলাকার জনসাধারণের জানমালসহ সার্বিক নিরাপত্তা এবং সরকারি সম্পদ রক্ষায় বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, ধর্মীয় ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে এবং জনবহুল স্থানে ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন’ প্রকল্প বাস্তবায়নের জনস্বার্থে পরিপত্র জারি করা হলো। এরও আগে টিআরের টাকায় সোলার প্যানেল সরবরাহ করত সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)। গত অর্থবছর থেকে সোলার প্যানেল কেনা বন্ধ করে দেয় মন্ত্রণালয়।

 

সর্বশেষ খবর