রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

আমদানি নিষিদ্ধ হলো ক্যাসিনো জুয়ার সরঞ্জাম হরর কমিকস

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

অবশেষে আমদানি নীতিতে নতুন একটি ধারা সংযোজন করে নিষিদ্ধ করা হলো ক্যাসিনোসহ জুয়া খেলায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম। একই সঙ্গে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল আমদানিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া এতদিন আমদানি নীতিতে সুযোগ না থাকলেও এবার বৈদেশিক মিশনে কর্মরত কর্মচারীদের ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহৃত আট বছরের পুরনো গাড়ি দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি অনুমোদিত নতুন আমদানি নীতি আদেশে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় এসব ধারা সংযোজিত হয়েছে। পরবর্তী তিন বছরের জন্য প্রস্তাবিত ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪’ গত সোমবার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার কয়েকটি ক্লাবে একযোগে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীসহ দেশের স্বনামধন্য ক্লাবগুলোতে র‌্যাবের ধারাবাহিক অভিযানে বেরিয়ে আসতে থাকে ক্যাসিনোর অন্ধকার জগৎ। একে একে গ্রেফতার হন ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন বড় নেতা। এসব ক্লাব থেকে উদ্ধারকৃত ক্যাসিনো ও জুয়া খেলার সামগ্রীর দাম ছিল কয়েক কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠেছিল শুল্ক দফতরের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। শেষে বেরিয়ে আসে আমদানি নীতিতে ক্যাসিনো পণ্য নিষিদ্ধ নয়। এ পর্যায়ে আমদানি নীতি তালিকায় ক্যাসিনো পণ্য ও জুয়া খেলার সামগ্রী নিষিদ্ধ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় এনবিআর।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আগের আমদানি নীতিতে যে কোনো নাগরিকের ধর্মীয় বিশ্বাস বা অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এমন কোনো পণ্য আনা যাবে না- মর্মে উল্লেখ ছিল। দেশীয় সংস্কৃতি বা সামাজিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়- এমন পণ্য আমদানি না করার নীতিও ছিল। তবে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ক্যাসিনো পণ্যের নাম ছিল না। এখন ক্যাসিনো খেলাটি যেহেতু অবৈধ এবং সংবিধানে বর্ণিত মূল নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সে কারণে ক্যাসিনোসহ জুয়া খেলার সরঞ্জাম আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ তালিকায় পুরনো মোটরসাইকেল : আগের আমদানি নীতিতে তিন বছরের অনধিক পুরনো মোটরসাইকেল আমদানির সুযোগ থাকলেও নতুন নীতিতে ব্যবহৃত বা পুরনো মোটরসাইকেল আমদানির এ ধারাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। জানা গেছে, দেশে গড়ে ওঠা মোটরসাইকেল শিল্পকে সুবিধা দিতে আমদানি নীতি থেকে আগের ধারাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে তিন বছরের পুরনো মোটরসাইকেল আমদানির সুযোগ ছিল। এ তিন বছর সময়কাল যানবাহন তৈরির পরবর্তী বছরের প্রথম দিন থেকে গণনা করার কথা। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এ নীতির সুযোগ নিয়ে দেশে বিপুল পরিমাণ ব্যবহৃত মোটরসাইকেল সীমান্ত দিয়ে আমদানি করে। এছাড়া এর ফলে মোটরসাইকেল চোরকারবারিও বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে নতুন আমদানি নীতিতে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল আমদানির ধারাটি বাদ দেওয়া হয়। এছাড়া আগের মতোই নতুন নীতিতে ১৬৫ সিসির বেশি ক্ষমতার মোটরসাইকেল আমদানি করা যাবে না। তবে পুলিশের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। এছাড়া মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ৫০০ সিসির মোটরসাইকেল ইঞ্জিন যন্ত্রাংশ আমদানির সুযোগ পাবে।

মিশনের কর্মচারীরা ব্যবহৃত গাড়ি দেশে আনতে পারবেন : বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কর্মচারীগণ তাদের ব্যবহৃত গাড়ি দেশে আনার সুযোগ পেয়েছেন। এর আগে এ ধরনের কোনো সুযোগ না থাকলেও নতুন একটি ধারা সংযুক্ত করে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে অনুমোদিত নীতিতে। নতুন এ ধারাটিতে বলা হয়েছে- মিশনে কর্মকাল শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহৃত গাড়ি দেশে আনতে পারবে কর্মচারীগণ। শুধু তাই নয়, আমদানিকারকদের পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ি আমদানির সুযোগ দিলেও মিশনের কর্মচারীরা আট বছরের পুরনো গাড়ি দেশে আনতে পারবেন।  

প্রচলিত নিষিদ্ধ পণ্য : প্রচলিত যেসব পণ্য আগের নীতির ধারাবাহিকতায় নতুন নীতিতে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় স্থানান্তরিত হয়েছে সেগুলো হলো- চিংড়ি মাছ, জীবিত শূকর ও শূকরজাত সব ধরনের পণ্য, পপি সিড ও পোস্ত দানা, ঘাস ও ভাং, ওয়াইন লিজ ও আরগোল, ঘন চিনি, কৃত্রিম সরিষার তেল, লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি), লিকুইফাইড প্রপ্রেন ও বিউটেনস (যা এলপিজির অংশ) ব্যতীত পেট্রোলিয়াম গ্যাস এবং অন্যান্য গ্যাসীয় হাইড্রোকার্বন, পেট্রোলিয়াম কোক এবং পেট্রোলিয়াম বিটুমিন ব্যতীত পেট্রোলিয়াম তেলের রেসিডিউসমূহসহ সব পণ্য, পলি প্রোপাইলিন ব্যাগ ও পলিইথিলিন ব্যাগ, থ্রি হুইলার যানবাহনের  টেম্পু, অটোরিকশা, দুই স্ট্রোক ইঞ্জিনসহ চেসিস, গ্যাস সিরিঞ্জ ইত্যাদি। এছাড়াও আগের তালিকায় ‘ভীতি প্রদায়ক কৌতুক’ আমদানি নিষিদ্ধ থাকলেও এবার এটি বাদ দিয়ে ‘হরর কমিকস’ শব্দাবলী প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। অনধিক ৭৫ ডেসিবল মাত্রার হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ থাকলেও এবার সেটি বাড়িয়ে ১০০ ডেসিবল করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর