মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

দেশে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন কেন্দ্র পুরোদমে চালু হচ্ছে আজ থেকে। খুলে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক রেখে উঠে যাচ্ছে বিধিনিষেধ। ধারাবাহিকভাবে কমছে সংক্রমণ হার। গতকাল শনাক্তের হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। নিয়ন্ত্রণে আসছে করোনা, ছন্দে ফিরছে জনজীবন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকাতে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা পুরোদমে চলছে। বিধিনিষেধ থাকায় এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় লাগামছাড়া হতে পারেনি করোনা। তিনি আরও বলেন, সুস্থ থাকতে সবাইকে এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাহলে আমরা প্রত্যাশিত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারব। মাস্ক পরলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় চালু থাকলে কোনো অসুবিধা হবে না। করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলে সচল থাকবে অর্থনীতির চাকা। গা-ছাড়া ভাব করা যাবে না। সবাইকে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহে দেশে করোনা শনাক্তের হার কমেছে প্রায় ৫১ শতাংশ। টানা দেড় মাস সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনাভাইরাস অন্যান্য সাধারণ রোগের মতো একটি রোগ হিসেবে গণ্য করা হবে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশে করোনায় মৃত্যু, নতুন রোগী ও পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার কমেছে। গত রবিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৫১ জন। এ সময় করোনায় সংক্রমিত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৮ হাজার ৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।

দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমছে প্রতি সপ্তাহে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গতকালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত হয় ৭৬ হাজার ২০০ জনের। আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে শনাক্তের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশে। পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ৭ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি মোট শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার ১৩২ জন। আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে শনাক্তের হার কমে ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সর্বশেষ ১৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৬২৭ জন। শনাক্তের হার কমেছে ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ।

১৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি করোনায় মৃত্যু হয় ১৪৬ জনের। তাদের মধ্যে ৯১ জন বা ৬১ দশমিক ৩ শতাংশই টিকা নেননি। টিকা পেয়েছেন ৫৫ জন বা ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। তাদের মধ্যে ছয়জন প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন ৪৮ জন এবং তৃতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন একজন। এ সপ্তাহে মৃতদের মধ্যে ৫৪ শতাংশের বেশি জনের ডায়াবেটিস ছিল। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন প্রায় ৫৯ শতাংশ। এ সপ্তাহে মৃতদের ৮০ শতাংশের বয়স ৫১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। দেশে করোনা পরিস্থিতি প্রায় সাড়ে তিন মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে রোগী বাড়তে শুরু করে। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার দ্রুত বাড়তে থাকে। ৬ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। এর দুই সপ্তাহের মাথায় ২০ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্ত ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় দৈনিক রোগী শনাক্ত ১৫ হাজারের ওপরে উঠেছিল। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা ১০ হাজারের ওপরে ছিল। এরপর নিয়মিত রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার কমছে। দেশে করোনার সংক্রমণ কমায় আজ থেকে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সামলিয়ে এই যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে, আমি প্রত্যাশা রাখব এই সময়ে আমাদের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং অন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের সবার মাঝে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের যে হতাশা ছিল, তা দূর করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যে আনন্দ আমরা উপভোগ করতে যাচ্ছি, সেই আনন্দে যেন আর কোনো বাধা না আসে। আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করার জন্য সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী খুব সচেতনভাবে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন আমি সেই প্রত্যাশা রাখছি।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর